বিষ্ণুপুরের পট, দশাবতার ছবিতে সাজছে কলকাতা-হাওড়ার মণ্ডপ
ল্ল রাজাদের বিনোদনের জন্য চালু হয়েছিল দশাবতার তাস। কয়েক শতাব্দী আগের শিল্প সুষমায় ভরা সেই দশ অবতার তাসের সৌন্দর্যই এ বার উঠে আসছে কলকাতার কসবার বোসপুকুর শীতলা মন্দির দুর্গোৎসবের মণ্ডপে। হাওড়া ময়দানের মিলন মন্দির পুজো কমিটির মণ্ডপের রূপ খুলবে সেই বিষ্ণুপুরের শিল্পীদেরই আঁকা বিশাল আকারের পটচিত্র। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মনসাতলায় শিল্পীর ঘরে তাই এখন তুমুল ব্যস্ততা।
মহানগর ও শহরতলির পুজো উদ্যোক্তরা গত কয়েক বছর ধরে জেলার শিল্পীদের তৈরি শিল্পসম্ভারে সাজিয়ে তুলছেন তাঁদের মণ্ডপ। আর তাতেই পুজো কমিটিগুলির মুকুটে একের পর এক পালক যোগ হচ্ছে। পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় উঠে আসছে জেলার শিল্পীদের নামও। কয়েক বছর ধরে পুজো উদ্যোক্তাদের মন জুগিয়ে মহানগরীতে এমন সম্মান পেয়ে খুশি বিষ্ণুপুরের মনসাতলার ফৌজদার বাড়ির শিল্পীরাও।
কসবার বোসপুকুর শীতলা মন্দির দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ সাজছে এক হাজার কাঠের খড়মে। তার উপরে আঁকা থাকবে দশাবতারের ছবি। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক কাজল সরকার বলেন, “বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাসের শিল্পকলা ভারতের অন্যতম প্রাচীন শিল্পের নিদর্শন। তা এখন অনেকের স্মরণে নেই। শিল্পীরাও উপেক্ষিত। এই প্রজন্মের মানুষের সামনে নতুন করে সেই শিল্পকে মেলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।”
হাতে সময় বেশি নেই। ব্যস্ত দুই শিল্পী। ছবি: শুভ্র মিত্র।
জেলার সমৃদ্ধ শিল্পকে তুলে আনার দৌড়ে পিছিয়ে নেই হাওড়াও। বিষ্ণুপুরের শিল্পীর আঁকা ২৪টি বিশাল আকারের পটচিত্রে সাজছে হাওড়া ময়দানের মিলন মন্দির পুজো কমিটির মণ্ডপ। পুজো কমিটির শিল্প নির্দেশক সোমনাথ বসাক বলেন, “বিষ্ণুপুরের একটি বিখ্যাত মন্দিরের অনুকরণে আমাদের মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে দশাবতার তাস তো থাকবেই, সেই সঙ্গে বিষ্ণুপুরের শিল্পীদের আঁকা দুর্গা, কালী প্রভৃতি দেবদেবীর বড় মাপের ২৪টি পটচিত্র থাকছে। বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির কাজ ও অন্য শিল্পকীর্তিও মণ্ডপে রাখা হবে। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে মণ্ডপে বাজানো হবে বিষ্ণুপুর ঘরানার গান।” সব মিলিয়ে এ বার পুজোয় হাওড়া ময়দানে উঠে আসছে প্রাচীন শিল্প ও সঙ্গীত নগরী বিষ্ণুপুর।
দু’টি কাজেরই বরাত পেয়েছেন বিষ্ণুপুরের মনসাতলার ফৌজদার বাড়ির শিল্পীরা। পটচিত্র শিল্পী বিদ্যুৎ ফৌজদার সপরিবারে এখন নিজের বাড়িতে সেই শিল্প তৈরি করে চলেছেন। নারকোল মালার বাটিতে রং গুলে তিনি পটচিত্র আঁকতে ব্যস্ত। তাঁর সঙ্গে তুলিতে টান দিচ্ছেন স্ত্রী মঞ্জুদেবী এবং দুই ভাইপো রাজু ও কুণাল। চারপাশে কাঠের খড়ম ডাঁই করে রাখা। বিদ্যুৎবাবু হাতে খড়ম ধরে দুর্গা প্রতিমার পটচিত্র আঁকছিলেন। পাশে তাঁর স্ত্রী মঞ্জুদেবী তখন অন্য একটি খড়মে ফুটিয়ে তুলছেন কল্কি অবতারের ছবি। কম বয়সি রাজু-কুণাল ব্যস্ত হলুদ গুঁড়ো থেকে রঙ তৈরির কাজে।
কাজের ফাঁকে বিদ্যুৎ জানালেন, “বিষ্ণুপুর রাজাদের অবসর বিনোদনের জন্য তৈরি হওয়া দশাবতার তাসের শিল্প নৈপুণ্যের কদর এখন কমছে। শীতকালে পর্যটকেরা কিছু কেনাকাটা করেন। বাকি সময় পেট চালানোর জন্য অন্য কাজ করতে হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে পুজো মণ্ডপের কিছু বরাত পাচ্ছি। এটাই আনন্দের।” কয়েক বছর আগে কলকাতায় ৬৬ পল্লির পুজো মণ্ডপের জন্য তাঁরা ৬০০ শাঁখের উপর দশাবতারের ছবি এঁকেছিলেন। বেহালার তপন সঙ্ঘের মণ্ডপেও তাঁদের কাজ দেখেছিল মহানগর। ওই কাজের জন্য বিদ্যুৎ পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিদ্যুৎ বলছেন, “পুজো কমিটিগুলির জন্যই এখন আমাদের উপর প্রচারের আলো পড়ছে। পুরস্কার পাচ্ছি। বিস্মৃতপ্রায় শিল্পও নতুন করে ফিরে আসছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.