জমিহারাদের আন্দোলনের চাপে রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত ক’দিন আগেই দিয়েছিলেন ডিভিসি-র মুখ্য বাস্তুকার। বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনও জানিয়ে দিলেন, প্রকল্পের কাজে টানা বাধা এলে ‘বিকল্প উপায়ের’ কথা ভাবতে পারেন।
বস্তুত, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রঘুনাথপুর থেকে তাঁদের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ (৬৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট) ঝাড়খণ্ডের কোডারমায় সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিল। এ দিন বণিকসভা সিআইআই-এর উদ্যোগে বিদ্যুৎ-শিল্প নিয়ে এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান। সভা শেষে প্রকল্প সরানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এখনই এ বিষয়ে কিছু ভাবছি না। তবে, ক্রমাগত কাজে বাধা আসতে থাকলে এবং একান্তই বাধ্য হলে বিকল্প উপায়ের কথা ভাবলেও ভাবতে হতে পারে।”
সে ক্ষেত্রে কি ঝাড়খণ্ডেই প্রকল্প সরবে? এর সরাসরি কোনও উত্তর দেননি রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি জানান, তাঁদের বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় ঝাড়খণ্ডও রয়েছে। কোডারমায় ডিভিসি-র জমি রয়েছে। জলেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রঘুনাথপুরে প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার কাজ একেবারে বন্ধ বলা যায় না। সেখানে নির্মাণের কিছু কাজকর্ম চলছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর আশ্বাস, “ডিভিসি-কে এখান থেকে চলে যেতে হবে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেব না। আমরা সব রকম ভাবে সাহায্য করব।” প্রশাসনের একাংশ অবশ্য বলছে, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এ রাজ্যেই পুরো প্রকল্পটি গড়তে চান।
স্থায়ী চাকরির দাবিতে চার দিন ধরে প্রকল্পের গেট আটকে বিক্ষোভ চলার পরে সোমবার প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলনকারী জমিদাতারা তা প্রত্যাহার করেন। শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। কিন্তু, দামোদর নদ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় জল নিয়ে আসার কাজ (ওয়াটার করিডর) জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির বাধায় এখনও থমকে। সে প্রসঙ্গে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান বলেন, “বেশির ভাগ গ্রামবাসী আমাদের পাশে থাকলেও কয়েক জন বিরোধিতা করছেন। সেই জটিলতা কেটে যাবে বলেই আমার আশা। তবে ওই প্রকল্পে জল আনতে ১০ কিলোমিটার যে পাইপলাইন পাতার কথা, তা পাততেই হবে। তা না হলে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে না।” বিকল্প হিসেবে স্থানীয় সালঞ্চি জোড় থেকে জল আনার কথা ডিভিসি ভেবে রাখলেও, সেই জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে পর্যাপ্ত নয়।
আন্দোলনকারী ‘ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দ্বিতীয় পর্যায়ের বিনিয়োগ (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) এখান থেকে চলে যাক, তা চাই না। তবে, জমিদাতারা যে প্রত্যাশা নিয়ে জমি ছেড়েছেন, তা ডিভিসি-কে পূরণ করতে হবে।” জমিরক্ষা কমিটির নেতা নিখিল মণ্ডলের বক্তব্য, “কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কথা যদি ডিভিসি না ভাবে, তাহলে ওদের প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করার দায়বদ্ধতাও আমাদের নেই।”
ডিভিসি চেয়ারম্যান কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন, জমি দেওয়া সত্ত্বেও কাউকে প্রকল্পে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, রক্ষণাবেক্ষণ-সহ অন্য কাজে ঠিকা কর্মীর কাজে তাঁরা যুক্ত হতে পারবেন। প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। |