দিন ছ’য়েক আগের কথা। সাকেতের আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁর মেয়ে যদি রাতবিরেতে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত আর বিয়ের আগেই যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হত, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতেন মেয়েকে। তিনি নির্ভয়া ধর্ষণ-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত অক্ষয় ঠাকুর ও বিনয় শর্মার কৌঁসুলি এ পি সিংহ। এ হেন মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল সে দিন থেকেই। এ বার দিল্লি বার কাউন্সিল শো কজ করলেন এ পি সিংহকে। ১১ অক্টোবরের মধ্যে মন্তব্যের কারণ ব্যাখ্যা করে জানাতে হবে তাঁকে।
গত শুক্রবার সাকেতের ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চত্বরে তখন থিকথিক করছে ভিড়। কিছু ক্ষণ আগেই নির্ভয়ার
|
এ পি সিংহ |
আইনজীবী এসে ঘোষণা করে গিয়েছেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। আদালত চত্বরেই এক দল লোক তখন নির্ভয়ার জয়ধ্বনি করছে। এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন এ পি সিংহ। ছেঁকে ধরলেন সাংবাদিকরা। প্রশ্নবাণ ছুটে আসতেই এ পি সিংহের আক্রমণ এ সব রাজনীতির খেলা, ‘পলিটিক্যাল জাজমেন্ট’। এখানেই থামেননি বিবাদীপক্ষের কৌঁসুলি। বলেন, এ ভাবে চার ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় আখেরে সমাজের কাছে কোনও সদর্থক বার্তা যাবে না। এ-ও জানান, দিল্লিতে যদি আর ধর্ষণের মতো ঘটনা না ঘটে, রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চতর আদালতে যাবেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, “...আমার মেয়ে যদি বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কে যেত আর রাতে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত, আমি ওকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতাম। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতেই দিতাম না। সব বাবা-মায়েরই এ রকম কড়া হওয়া উচিত।” টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও দেখা যায়, সিংহ-বিক্রমে এ কথা বলে চলেছেন তিনি।
কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগেনি। সমালোচনার ঝড় ওঠে টুইটার, ফেসবুকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এ পি সিংহের এ হেন মন্তব্য। ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকেই। কথা ওঠে এ বার কি তা হলে নির্ভয়ার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইছেন তিনি? এক জন আইনজীবী হয়ে, খুনের প্ররোচনাই বা দেন কী ভাবে? একটি আইনজীবী সংগঠনের সচিব মুরারি তিওয়ারি দিন কয়েক আগেই জানিয়েছিলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে তাঁদের কাছে। এসেছে অসংখ্য অভিযোগ। সকলকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জমা দেওয়া পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বার কাউন্সিল যে এ পি সিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সে ইঙ্গিতও তখনই দিয়েছিলেন তিনি।
তিওয়ারি বলেন, “পেশাগত ভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করেছেন তিনি।” এক জন আইনজীবী হয়ে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারেন না। অনেকে অবশ্য তখন বলেছিলেন, নিজের মক্কেলদের বাঁচাতে এ পি সিংহ এ সব বলছেন। কিন্তু এই সাফাই শেষমেশ ধোপে টিকল না। দিল্লি বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সূর্যপ্রকাশ খাতরি বলেন, “এ পি সিংহকে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছি। এ ধরনের নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের পরও কেন ওঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, তার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে ওঁকেই।” খাতরির মতে, “ওই মন্তব্য ভীষণ আপত্তিকর।” নানা মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা এ বার লাইসেন্স বাতিল করা হবে এ পি সিংহের।
|