পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শিল্পায়ন পৌঁছে দিতে ‘অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডর’ তৈরির সবুজ সঙ্কেত দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন।
পশ্চিম ভারতে শিল্পায়নের জন্য আগেই তৈরি হয়েছে ‘দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর’। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একই ভাবে পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও নতুন বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এই উদ্দেশ্যেই ‘অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডর’ তৈরির বাস্তবতা খতিয়ে দেখতে জুন মাসে একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী গঠন করেন মনমোহন। সেই গোষ্ঠী আজ তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে শুক্রবারই আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পুলক চট্টোপাধ্যায়।
এত দিন রাজ্য সরকারগুলি নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে তাঁদের রাজ্যে লগ্নির জন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করে এসেছে। এ জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থাকে বিশেষ আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়। পরিকাঠামো, জমি অধিগ্রহণ ও কাঁচামাল জোগানের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে রাজ্য সরকার। কিন্তু কেন্দ্রের লক্ষ্য— একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্প সংস্থাগুলির জন্য সব রকম পরিকাঠামো গড়ে তোলা। এর ফলে ওই এলাকায় এক সঙ্গে একগুচ্ছ শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। কেন্দ্রের আশা, এর ফলে আর্থিক বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন শিল্প-শহরও গড়ে তোলা যাবে।
আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীর রিপোর্ট বলছে— হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে পঞ্জাব থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত এই শিল্প করিডরটি গড়ে উঠলে এই সাত রাজ্যের অন্তত ২০টি শহর লাভবান হবে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল, দুর্গাপুর ও কলকাতাও। গোষ্ঠীর সুপারিশ, রেলের প্রস্তাবিত পণ্য করিডরের দু’দিকেই ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার এলাকায় এই শিল্প করিডর গড়ে তোলা হোক। প্রথম দফার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই আসবে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দ থেকে। মূলত রেলের পূর্ব পণ্য করিডর ও ২ নম্বর জাতীয় সড়কই নতুন এই শিল্প করিডরের জীবনরেখা বা মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ এই রেল ও সড়ক পথ ধরেই কারখানায় কাঁচামাল পৌঁছবে। সেখান থেকে উৎপাদিত পণ্যও পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। পণ্য করিডর ও জাতীয় সড়ক থেকে শিল্প তালুক পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে নতুন প্রকল্পে।
কী ভাবে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে রাজ্যগুলিতে?
আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীর সুপারিশ, প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি রাজ্য অন্তত একটি করে ‘ইন্টিগ্রেটেড ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার’ গড়ে তোলার চেষ্টা করুক। এর আয়তন হবে প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার। এগুলির শতকরা ৪০ ভাগ জায়গা কারখানা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। অর্থাৎ প্রথম দফায় এই সাতটি রাজ্যে সাতটি শিল্প তালুক গড়ে তুলতে চাইছে কেন্দ্র। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে অথবা পুরোপুরি সরকারি অর্থেই এর জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর পুরো বিষয়টি উপর থেকে দেখাশোনা করবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। শিল্প করিডরে বিভিন্ন প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য শিল্পসচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী তৈরি হবে। পাশাপাশি ‘অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডর উন্নয়ন নিগম’ নামের পৃথক সংস্থাও তৈরি হবে। এ ছাড়া মুখ্যসচিব বা শিল্পোন্নয়ন দফতরের প্রধানের নেতৃত্বে একটি ‘ডেডিকেটেড সেল’ তৈরির অনুরোধ জানানো হবে রাজ্যগুলিকেও।
কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা নিয়ে শিল্পমহলে সংশয়ও অবশ্য কম নেই। কারণ যে রাজ্যগুলিতে এই শিল্প করিডর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলি সবই জনবহুল। দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষ এই সাত রাজ্যে বাস করেন। সুতরাং জমির সমস্যা প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারে প্রকল্পটির। এই একই কারণে পূর্ব পণ্য করিডরের কাজও বহু জায়গায় আটকে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তো এই কাজ কার্যত শুরুই হয়নি। এর পরে এতগুলো শিল্পতালুক কী ভাবে হবে, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। সরকারি সূত্রে অবশ্য দাবি, নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই সহায়ক হয়ে উঠবে।
|