শিল্প ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানতে পশ্চিমের পর এ বার পূর্বে তাকালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। দিল্লি-মুম্বই নির্মীয়মাণ শিল্প করিডরের ধাঁচে অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডর গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু করতে আজ আন্তঃমন্ত্রক কমিটি গড়ে দিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, পঞ্জাব থেকে শুরু করে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রস্তাবিত ওই শিল্প করিডরে অন্তত ১০টি নতুন শিল্পনগরী গড়ে তুলবে সরকার।
তাতে ন্যূনতম তিরিশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
মন্দার গ্রাস কাটিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিবাচক বলেই মনে করছে শিল্পমহল। তবে লোকসভা ভোটের আগে মনমোহন সিংহ সরকারের এই ঘোষণার মধ্যে একটি রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, এক দিকে বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বার্তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার নীতীশ কুমার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আঞ্চলিক দলগুলির নেতা-নেত্রীকে বোঝাতে চাইছেন, উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি করছে না কংগ্রেস। বরং রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই চলছে।
জাপানের আর্থিক সহযোগিতায় দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। পশ্চিমের ওই শিল্প করিডরে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডরে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কমপক্ষে তার আড়াই গুণ বেশি।
কারণ, দিল্লি-মুম্বই করিডর এমনিতেই পরিকাঠামোর দিক থেকে উন্নত। তুলনায় অনুন্নত দেশের বিস্তৃত পূর্বাঞ্চল। তাই পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা পূর্বে অনেক বেশি।
মনমোহনের সচিবালয় সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত এই নতুন শিল্প করিডর যে শহরগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সেগুলি হল, অমৃতসর, জালন্ধর, লুধিয়ানা, অম্বালা, সাহারানপুর, দিল্লি, রুরকি, মোরাদাবাদ, বরেলী, আলিগড়, কানপুর, লখনউ, ইলাহাবাদ, বারাণসী, পটনা, হাজারিবাগ, ধানবাদ, আসানসোল, দুর্গাপুর ও কলকাতা। শিল্প করিডরের আওতায় এই শহরগুলিকে কেন্দ্র করে নতুন শিল্পনগরী গড়ে উঠবে। সেখানে মেট্রো রেল করিডর, দুই শহরের মাঝে বুলেট ট্রেন, দিল্লি-আগরার মতো অন্তত ১০টি আন্তঃশহর এক্সপ্রেসওয়ে গড়ে তোলারও প্রস্তাব রয়েছে।
প্রকল্পটির জন্য গঠিত কমিটিতে রয়েছেন বাণিজ্য, অর্থ, নগরোন্নয়ন, জাহাজ ও রেল মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রের তরফে বলা হচ্ছে, লুধিয়ানা থেকে কলকাতার ডানকুনি পর্যন্ত যে পণ্যবাহী করিডর গড়ে তুলছে রেল সেটাই প্রস্তাবিত শিল্প করিডরের মেরুদণ্ডের মতো কাজ করবে। অর্থাৎ ওই পণ্যবাহী করিডরের দু’পাশে শিল্পতালুকগুলি গড়ে তোলা হবে। শিল্প করিডরের কথা মাথায় রেখে জলপথ পরিবহণে পরিকাঠামো বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে সরকার। ইলাহাবাদ থেকে হলদিয়া পর্যন্ত জলপথে পরিবহণের সুযোগ বাড়ানোর জন্য একটি বিস্তারিত প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।
তবে শিল্পমহলের একাংশের মতে, সরকারের তরফে এই ঘোষণা করা হলেও কিন্তু তার বাস্তবায়ন কত দিনে হবে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কেননা পূর্বাঞ্চলে শিল্প করিডর গড়ে তোলার পথে বড় বাধা হল জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা। লুধিয়ানা থেকে ডানকুনি পর্যন্ত পণ্যবাহী রেল করিডরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতেই পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগে গিয়েছে। তাও প্রকল্পের জন্য পুরো জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। বিহারের শোননগর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণের কাজ রাজনৈতিক বাধায় এখনও শুরু করা যায়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে বলা হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা যে রয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীও জানেন। তাই নতুন জমি বিল সংসদে পাশ করানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে আন্তরিক। পূর্বের করিডরে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপান। তবে আর্থিক সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও কথা বলবে কেন্দ্র। |