মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কুড়ি মিনিটের টেলিফোনও গলাতে পারল না বরফ। তাঁর ফোন, ই-মেলে নজরদারি চালানোয় রুষ্ট ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ শেষ পর্যন্ত স্থগিত করে দিলেন আমেরিকা সফর। হোয়াইট হাউস ও রোসেফের অফিস, দু’জায়গা থেকেই জানানো হয়েছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত এই সফর।
চলতি মাসের গোড়াতেই মার্কিন গুপ্তচর স্নোডেন দাবি করেছিলেন, আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থার হাত থেকে রেহাই পাননি পড়শি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও। স্নোডেনের ইঙ্গিত ছিল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ ও মেক্সিকোর এনরিকে পেনিয়া নিয়েতোর দিকে। দেশের সার্বভৌমত্বের উপর একে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে সরব হয় দুই দেশই। এত কিছুর মাঝে পড়ে ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টের আমেরিকা সফর বাতিল হতে পারে, সেই আশঙ্কা করা হয়েছিল তখনই। দিন পনেরো পর সত্যি হল সেই আশঙ্কাই।
সোমবার রাতে দিলমাকে ফোন করেন ওবামা। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা(এনএসএ)-র নজরদারি নিয়ে তদন্তের আশ্বাসও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হননি রোসেফ। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কারনে’র কথায়, তদন্ত হতে হতেও তো কয়েক মাস যাবে। এর মধ্যে বৈঠকের কোনও সম্ভাবনাই নেই। ২০১১ সালে রোসেফ ব্রাজিলের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উন্নতি হচ্ছিল ব্রাজিল-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। কিন্তু সাধারণ ব্রাজিলীয় থেকে মায় রাষ্ট্রপ্রধান নজরদারির আওতায় পড়ছেন, এই খবর সামনে আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে রোসেফ প্রশাসন। জঙ্গি হানা ঠেকাতেই এই বিশ্বজোড়া ফাঁদ, ওবামাদের এই দাবি মানতে মোটেই রাজি নয় ব্রাজিল। তাদের যুক্তি, তার জন্য কোনও দেশের প্রেসিডেন্টের ফোন, ই-মেলে নজর রাখতে হয় না।
ওবামা-রোসেফের বৈঠকে তেল, জৈব জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ২৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা দিয়ে বোয়িং কোম্পানির থেকে যুদ্ধবিমান কেনার কথাও ছিল ব্রাজিলের। কিন্তু তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে দেশকে ভরসাই করা যাচ্ছে না, তাদের থেকে যুদ্ধের সরঞ্জাম কেনার প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া তাদের খনিজ সমৃদ্ধ আমাজন উপত্যকা আমেরিকা দখল করতে চায়, এমনটা বহু দিন ধরেই মনে করত ব্রাজিল।
আমেরিকার এই দুই বড় অর্থনীতির সম্পর্কের টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত কত দূর গড়ায়, এখন সেই অপেক্ষাতেই সবাই। |