মাছ ধরতে বেরিয়ে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জিওন উক পিও। চল্লিশ বছর আগের কথা। কোনও খোঁজ না পেয়ে সবাই ভেবেছিলেন জিওন আর বেঁচে নেই। সম্প্রতি জিওনের লেখা একটা চিঠি থেকে জানা যায়, তিনি বেঁচে আছেন। তাঁকে অপহরণ করে রেখেছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু তিনি কোনও রকমে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন। বাড়ি ফিরতে চান। গত শুক্রবার অবশেষে নিজের পরিবারের লোকজনের কাছে ফিরে গেলেন জিওন।
১৯৭২ সালের এক বিকেল। আরও ২৩ জনের সঙ্গে দেশের পশ্চিম দিকে পীত সাগরে মাছ ধরছিলেন জিওন। তখন তাঁর বয়স ২৭। হঠাৎই কয়েকটি নৌকো তাঁদের ঘিরে ধরে। জোর করে জিওনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় একটা অন্ধকার ধরে। কয়েক দিন পরে তাঁরা জানতে পারেন উত্তর কোরিয়া অপহরণ করেছে তাঁদের। সেই শুরু। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জিওনকে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর কি না তা জানতে চলেছে অকথ্য অত্যাচার। কোনও প্রশ্ন করলেই জুটেছে আরও মার। এর মধ্যেই বাকি তেইশ জন মৎস্যজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। প্রতি দিন ভাবতেন কী করে পালাবেন এখান থেকে।
গত ১১ অগস্ট হঠাৎ করেই সুযোগ এসে যায় জিওনের কাছে। রাতের অন্ধকারে রক্ষীদের গাফিলতির সুযোগে পালান জিওন। এর পর শুরু হয় কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পথ চলা। সব সময় আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াত, কেউ ধরতে আসছে না তো? জল নেই। খাবার নেই। তত ক্ষণে দিন-রাতের হিসেব হারিয়ে ফেলেছেন জিওন। প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় জঙ্গলের ভিতরে পড়েছিলেন। তখনই তাঁকে উদ্ধার করেন কয়েক জন। তাঁরা কোন দেশের তা অবশ্য জানা যায়নি। সেই দেশেই আশ্রয় নেন জিওন। সেখান থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউং হে-র কাছে বাড়ি ফেরার আবেদন জানিয়ে চিঠি লেখেন তিনি।
জিওনের আবেদন ফেলতে পারেননি পার্ক। গত শুক্রবার সোলে ফিরে আসেন জিওন। উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর কি না তা জানতে বেশ কয়েক ঘণ্টা কড়া জেরা চলে। নিশ্চিন্ত হওয়ার পরে সুযোগ মেলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করার।
চল্লিশ বছর পরে দেশের মাটিতে পা দিয়ে কান্না চাপতে পারেননি বছর আটষট্টির জিওন উক পিও। সেই যুবক বয়সে শেষ দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। তার পর গত শুক্রবার। মাঝের চল্লিশ বছরে অনেক বদলে গিয়েছে দেশটা। বললেন, “আর কোনও দিন দেশে ফিরতে পারব ভাবিনি। খালি মনে হত, পরিবারের সবাই কেমন আছে? আমি বেঁচে আছি জানলে ওরা কী ভাববে?”
জিওনের এই ফিরে আসা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। বহু দিন ধরেই দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করে আসছিল তাদের দেশের লোকেদের মাঝে মধ্যেই অপহরণ করে নিয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। কিন্তু কখনও উত্তর কোরিয়ার তরফে তা স্বীকার করা হয় না। সম্প্রতি জেনিভায় উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি কমিশনের বৈঠক ছিল। সেখানে কমিশনের তরফে রন রেডমন্ড জানান, উত্তর কোরিয়ায় কত জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক আটক রয়েছেন তা অজানা। তবে অপহরণ যে হয় তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
জিওন তো ফিরতে পারলেন। কিন্তু বাকি তেইশ মৎস্যজীবী? উত্তরটা অজানাই। |