ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এ বার এক ব্যক্তির মৃত্যু হল কোচবিহারে। মঙ্গলবার কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালে ওই ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম পূর্ণ দাস (৫৩)। বাড়ি কোচবিহার ২ ব্লকে ধর্ম ঘরকুঠি এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই ব্যক্তি কর্মসূত্রে জয়গাঁতে যাতায়াত করতেন। কয়েক দিন আগে তিনি জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সোমবার রাতে তিনি কোচবিহার জেলা হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হন। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। পরীক্ষায় তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু থাকার বিষয়টি ধরা পরে। তা দেখেই ডেঙ্গির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রোধে প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই ডেঙ্গির জীবাণু পরীক্ষার ব্যাপারে ‘ম্যাক এলাইজা টেস্ট’-এর যন্ত্রাংশ কোচবিহারে আনা হচ্ছে। তা হলে ডেঙ্গি নিশ্চিত হওয়ার রক্ত পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা বা রক্ত নমুনা পাঠানোর সমস্যা মিটবে।
|
শিলিগুড়িতে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অপর এক কিশোরীও মারা যান। তবে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ে তার রক্তে পরীক্ষা হয়নি। ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি অপর এক রোগিও রবিবার ভোর রাতে মারা যায় শিলিগুড়ির তিলক রোডের একটি নার্সিংহোমে। তবে ডেঙ্গিতে নয় তিনি ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছেন বলে চিকিত্সক জানিয়েছিলেন। শিলিগুড়িতে ডেঙ্গির সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতি দিনই রক্ত পরীক্ষায় নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত শিলিগুড়ি পুর এলাকাতেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪০০ ছাড়িয়েছে। মাটিগাড়া এলাকাতেও ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মহকুমার অন্যান্য এলাকা এবং জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন জায়গা মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৫০০। দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উ্যদোগে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ে শিবির করা হলেও তা পর্যপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে জ্বর নিয়ে রোগীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি জ্বরে আক্রান্তদের চিকিত্সা পরিষেবা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে আলোচনা করে ৫ জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ না হলেও তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “জ্বরে আক্রান্ত হলেও তাদের হাসপাতালে থেকে চিকিত্সা করাতে হবে এমন পরিস্থিতি নয়। তাই ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গির আতঙ্ক রয়েছে বলে অনেকে তা বুঝতে চাইছেন না। সে কারণে ওই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে হাসপাতালের সুপার, নার্সিং সুপারিনটেন্ডেন্ট, সহকারি সুপার এবং চিকিত্সকেরা থাকবেন। ডেঙ্গি নিয়ে রোগীর পরিবারের কারও অভিযোগ থাকলে ওই কমিটির সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।”
কোচবিহারে এ দিন পূর্ণবাবুর মৃত্যুর খবরে ডেঙ্গির আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য পরিমল বর্মন জানান, এলাকায় জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরেরই এক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলা বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। জেলা হাসপাতালে গত কয়েকদিন থেকেই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। সোমবারেও ওই হাসপাতালে অন্তত ৩০ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন। দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালেও জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা রয়েছেন। |