আসানসোল পুরসভা এলাকার জন্য স্বতন্ত্র একটি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়তে নতুন একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিকাঠামো থেকে পুরবাসী কী কী সুবিধা পাবেন, তা বিস্তারিত ভাবে এই প্রকল্পে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে প্রকল্পটির রূপায়ণের আগে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সব তথ্য সরবরাহের কাজ চলছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে বছর দেড়েকের মধ্যেই এই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা পুর কর্তৃপক্ষের।
এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল আরবান হিউম্যান মিশনের অন্তর্গত। এই প্রকল্পটি মূলত পুর এলাকার বস্তি অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছে। আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যের পাঁচটি পুরসভা এই বিশেষ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার অনুমোদন পেয়েছে। আসানসোল সেগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রকল্প গড়ার আগে তথ্য আদানপ্রদান-সহ যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পুরসভার চিকিৎসক অজয়কুমার সেনকে দেওয়া হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৯০ শতাংশ অর্থ দেবে। রাজ্য সরকার দেবে বাকি ১০ শতাংশ।
|
এই নতুন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সুবিধাগুলি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুরসভার চিকিৎসক অজয়কুমার সেন জানান, বর্তমানে পুরসভা ‘রিপ্রোডাক্টিভ অফ চাইল্ড হেল্থ’ (আরসিএইচ) নামের একটি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো চালায়। এ বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষের আগাম অভিজ্ঞতাও আছে। ফলে এই নতুন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোটি চালাতে তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না বলেই দাবি অজয়বাবুর। তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটিতে উল্লেখ করা হয়েছে পুরসভা এলাকার প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বানানো হবে। প্রতি ছয়লক্ষ জনসংখ্যা পিছু একটি পূর্ণমাত্রার হাসপাতাল বানানো হবে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ৫০টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষ বসবাস করেন। সে ক্ষেত্রে ১১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একটি হাসপাতাল পাওয়া যাবে। এই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে সর্বক্ষণের চিকিৎসক থাকবেন। থাকবে পরীক্ষাগার ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রও। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন। এখান থেকে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হবে।
অজয়বাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে পুরসভার যে আরসিএইচ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোটি আছে সেখানে দু’টি হাসপাতাল আছে। একটি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এবং অন্যটি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। নতুন প্রকল্পটি কাজ শুরু করলে আরও একটি হাসপাতাল মিলবে। এই নতুন পরিকাঠামোটি তৈরি হলে পুরবাসী কী ভাবে লাভবান হবেন? অজয়বাবু দাবি করেন, পুরসভার স্বতন্ত্র একটি উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি হলে পুর এলাকার মানুষজনকে কথায় কথায় মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে ছুটতে হবে না। নিজেদের হাসপাতালেই চিকিৎসা পাবেন। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বস্তি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা কার্যত হাতের মুঠোয় হাসপাতাল পেয়ে যাবেন। অজয়বাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সহায়ক বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে চেয়েছে। আমরা সেগুলি পাঠিয়ে দিয়েছি।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলে মোট ১৪২টি বস্তি অঞ্চল আছে। প্রায় ১৮৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসবাসকারী এক লক্ষেরও বেশি বস্তি অঞ্চলের বাসিন্দা নতুন এই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো থেকে উপকৃত হবেন। এ প্রসঙ্গে আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আরসিএইচ সেন্টারগুলির পাশাপাশি নতুন এই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এক যোগে কাজ করবে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো নতুন এই পরিকাঠামোর প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদী জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিকাঞ্চন সাহা। তাঁর অভিযোগ, আসানসোল মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের চাপ সহ্য করতে হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালকে। পাশ্ববর্তী জেলা ও রাজ্যের রোগীরাও এখানে আসেন। ফলে পরিষেবা দিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। এই অবস্থায় আসানসোল পুর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রস্তাবিত এই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অনুমোদনে অনেকটা চাপমুক্ত হবে জেলা হাসপাতাল।
মনিকাঞ্চনবাবু বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই প্রকল্প রূপায়নে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও এই প্রকল্পটি রূপায়ণের মূল দায়িত্ব থাকবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। |