চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করছেন, নিদানও দিচ্ছেন। কিন্তু ওষুধ নেই। এক দিন-দু’দিন নয়, মাস দেড়েক ধরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের আয়ুর্বেদিক বিভাগের এই হাল। তাই চিকিৎসা করাতে এসে নিখরচায় ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। এই বিভাগের পরিকাঠামোগত সমস্যা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে রোগীদের মধ্যে। ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো অবিলম্বে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে আয়ুর্বেদিক বিভাগে প্রয়োজনীয় ওষুধ জোগাড় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে শুরু হয় আয়ুর্বেদিক বিভাগ। প্রথমে মর্গের পাশে একটি ছোট্ট ঘরে এই বিভাগ শুরু হলেও দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে হাসপাতাল চত্বরের অন্যত্র কিছুটা বড় জায়গায় ওই বিভাগ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, স্ত্রীরোগ, পেটের সমস্যা, বাতের ব্যথা, কৃমি, জ্বর-সর্দি ও মাথা ব্যথা, ত্বকের সমস্যা-সহ আরও কিছু রোগের ওষুধ এখানে মিলত। কিন্তু মাস দেড়েক ধরে অশোক লৌহ, আমলাদ্য লৌহ, অম্লকাদি চূর্ণ, বাকচিন্তামণি রস, লক্ষ্মীবিলাস রস, চতুঃসম প্রভৃতি ওষুধগুলি কল্যাণী থেকে নিয়ে আসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এখন রোগীদের চিকিৎসা করা হলেও ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। |
পুরুলিয়া শহরের কেতিকা এলাকার বাসিন্দা রীতা পরামানিকের অভিজ্ঞতা, “সম্প্রতি আয়ুর্বেদিক বিভাগে চিকিৎসক পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিলেন। কিন্তু ওষুধের কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, ওষুধ নেই, বাইরে কিনতে হবে।” বরাবাজারের ধানাড়া গ্রাম থেকে শ্যামল মাহাতো বাতে আক্রান্ত তাঁর বছর দশেকের ভাগ্নীর চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “এই বিভাগে বাতের ভাল চিকিৎসা করা হয় বলে শুনেছিলাম। এসে দেখি ওষুধই নেই। সব ওষুধ কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। এখানে পেলে উপকার হত।” পুরুলিয়া মফস্সল থানার চিড়কা গ্রামের বংশীধারী পাণ্ডে এসেছিলেন পেটের সমস্যা নিয়ে। তাঁর কথায়, “এখানে চিকিৎসা করিয়ে সুফল পেয়ে ফের এসেছিলাম। কিন্তু কোনও ওষুধই নেই!” স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, আগে এখানে বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ১৫০ জন চিকিৎসা করাতে আসতেন। ইদানিং তা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ওষুধের জোগানের অভাবেই রোগীরা মুখ ফিরিয়েছেন বলে তাঁদের মত।
এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাপস কবিরাজ বলেন, “সমস্যার কথা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে।” জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “আমি সমস্যার কথা সম্প্রতি শুনেছি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে আযুবের্দিক বিভাগে দ্রুত ওষুধ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে বলেছি।” ওষুধ কেন নেই? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওষুধ নিয়ে আসার গাড়ি থাকলেও চালকের অভাবে এতদিন কল্যাণী থেকে ওষুধ আনা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে দফতরের গড়িমসি রয়েছে বলেও এক স্বাস্থ্যকর্তা স্বীকার করেন। জেলা. মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “কল্যাণী থেকে ওষুধ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। শীঘ্রই ওষুধ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
শুধু ওষুধ নিয়েই নয়, এই বিভাগের সামগ্রিক অবস্থা নিয়েও স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে নানা মহলে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পঞ্চকর্ম, অগ্নিকর্ম-সহ আয়ুবের্দিক চিকিৎসা পদ্ধতির নানা আধুনিক সরঞ্জাম আনা হয়েছিল কেরল থেকে। ঠিক হয়েছিল বহির্বিভাগের পরে অন্তর্বিভাগও চালু করা হবে। কিন্তু ওই সব সরঞ্জাম এখন ব্যবহার করা হয় না। তাতে ধুলো জমছে। আগে দু’জন চিকিৎসক ছিলেন। এখন একজন রয়েছেন। অন্য এক জন তিন দিন করে কলকাতা ও পুরুলিয়ায় চিকিৎসা করছেন। চাপ সামলাতে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে ২ জন চিকিৎসককে। কিন্তু তা যে পর্যাপ্ত নয়, মানছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও। এই বিভাগে স্থায়ী ভাবে ফার্মাসিস্ট নেই। নেই জিডিএ। |