কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে ডাকলে চোখের পাতা দু’টো সামান্য কাঁপে। বিছানার সঙ্গে যেন মিশে শুয়ে রয়েছেন এক তরুণী। শীর্ণ আঙুলগুলো মুঠো করা। কোনও মতে তর্জনীটি সামান্য ওঠে। আর পারেন না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বললেন, “তিন দিন হল, মাঝে মধ্যে হাত দিয়ে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করেন। এই টুকুই সাড়া দিচ্ছেন।”
২৭ অগস্ট সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির বানারহাট থেকে বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে এই আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণের পরে গলা টিপে খুনের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পরে সে দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। তারপর থেকে তিনি এই মেডিক্যাল কলেজ চিকিৎসাধীন। সেই থেকে ২১ দিন ধরে ওই তরুণী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে চিঠি পাঠিয়ে কলকাতা থেকে নিউরো সার্জেন পাঠানোর আর্জি জানিয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারের বক্তব্য, “ওঁর পরিস্থিতি দেখে নিজেকে ঠিক রাখা সম্ভব নয়। তিনি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন তার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছি।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, তরুণীর কোমরের একটি হাড় ভেঙে গিয়েছে। বুকের হাড়ও ভেঙেছে। দু’টি ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার সফল। কিন্তু প্রচন্ড জোরে গলা টেপার ফলে অক্সিজেনের অভাবে ওই তরুণীর মস্তিষ্কে রক্ত সংবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাতেই মস্তিষ্কের বেশ কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এই মেডিক্যাল কলেজে নিউরো সার্জারি বিভাগ নেই। সুপার সব্যসাচীবাবু বলেন, “নিউরো সার্জেনরা এসেই স্থির করবেন তরুণীর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা দরকার কি না।”
উত্তরবঙ্গ মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেন, “যে হেতু ওই তরুণীকে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনতে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দেব।” ঘটনার দিন যে যুবক ওই তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন, তাকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |