সরস্বতী পুজোয় লেখাপড়া করতে নেই, এই আপ্তবাক্য আউড়ে সে-দিন বইপত্তর শিকেয় তুলে রাখে বহু পড়ুয়া। আর দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার কাজকারবার যন্ত্র নিয়ে। তাই তাঁর পুজোর দিনে যন্ত্রে হাত ছোঁয়ালেন না রাজ্যের খাদ্য দফতরের বেশির ভাগ কর্মীই!
খাদ্য দফতরের কম্পিউটার, টাইপরাইটারের গায়েও এ দিন ঘটা করে ফুলচন্দন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলি চালু হয়নি সারা দিন। ফলে মঙ্গলবার কার্যত কোনও কাজই হয়নি ওই দফতরে। কর্মসংস্কৃতির এমন হাল দেখে তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, হাজিরা কম থাকলেও কাজকর্ম হয়েছে স্বাভাবিক গতিতেই।
ওই দফতর সূত্রের খবর, খাদ্যভবনে মন্ত্রীর সচিবালয় বাদ দিয়েও ন’টি ডিরেক্টরেট আছে। সব মিলিয়ে কর্মী-সংখ্যা ১৪৭২। এ দিন এসেছিলেন ১০২৫ জন অর্থাৎ ৭০%। কিন্তু অফিস ঘুরে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ঘরই খালি। হাজিরা খাতায় সই করার পর থেকেই বহু কর্মীর দেখা মেলেনি সারা দিনে। দফতরের এক কর্তা বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানলাম, অনেকেই নাকি নিউ মার্কেটে পুজোর বাজার সারতে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা আবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে যন্ত্রে গাত ছোঁয়াতে নারাজ। দেবতা কুপিত হতে পারেন, এই আশঙ্কায়!” অনেক জরুরি চিঠিপত্রের কাজও সারতে না-পারায় কর্তারা বেশ বিব্রত। বিষয়টি খাদ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছে যায়।
এ দিন হাবরায় পুরভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কাজ যে হয়নি, সেটা জানতে পেরেছি। কেন কর্মীরা কাজ করলেন না, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। আসলে দীর্ঘ বাম জমানায় কর্মসংস্কৃতির দফারফা হয়ে গিয়েছে! যে-কোনও ছুতোনাতায় কাজ না-করাটাই এঁদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সেই ধারা দেখছি আমাদের এই দু’বছরেও বদলায়নি।” মন্ত্রীর সাফ কথা, “কাজ করার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতেই হবে। এবং তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ করতেই হবে।”
খাদ্য দফতরের কর্মী ইউনিয়নগুলি মন্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য সহমত নয়। তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোশিয়েসনের খাদ্য দফতর শাখার রাজ্য সম্পাদক সমীরণ রায় বলেন, “হাজিরা কিছু কম ছিল ঠিকই। কিন্তু কাজকর্ম হয়নি, এটা মানছি না। মন্ত্রীমশাই কী বলেছেন, জানি না। তাঁর তদন্তের নির্দেশ নিয়েও কোনও মন্তব্য করছি না। কিন্তু উপস্থিত কর্মীরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন”। খাদ্য ভবনের কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক দেবব্রত রায় বলেন, “প্রতিটি ঘর ঘুরে ঘুরে তো দেখিনি। তবে কাজকর্ম হয়নি, এমনটা নয়। সহকর্মীরা কাজ করেছেন। কম্পিউটারে ফুলচন্দন চোখে পড়েছে। কিন্তু কোনও কর্মী তা চালায়নি, এ কথা ঠিক নয়।”
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রীর ঘর, খাদ্য কমিশনারের ঘরের মতো কিছু জায়গায় কাজকর্ম হয়েছে। কিন্তু অনেক অফিসারই কাজের জন্য লোক খুঁজে পাননি। মহাকরণ-সহ অন্য অফিসগুলিতে অবশ্য কাজকর্ম শিকেয় ওঠেনি।
ব্যতিক্রম খাদ্যভবন। কাজ হয়নি বলেই তদন্ত হবে। তদন্তের পরে কী হবে? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, “ফাঁকিবাজ কর্মীদের চিহ্নিত করা হবে। তার পরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।” |