ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর জেরে মঙ্গলবার থেকেই কার্যত উধাও হয়ে গেল বেসরকারি বাস। আজ বুধবারও শহরের পথে তাদের দেখা পাওয়ার আশা কম।
বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই দিয়েছেন, “বাস-শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় উৎসব বিশ্বকর্মা পুজো। তাই বেশির ভাগ শ্রমিকই বাস চালাতে চান না। আমরাও জোর করে বাস চালাতে বলি না।
কাল (বুধবার) পুজোর ভাসান আছে। ফলে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না।”
বেসরকারি বাস মালিকদের দাবি, সাধারণ দিনে কলকাতা ও লাগোয়া জেলায় প্রায় চার হাজার বাস চলে। এ দিন চলেছে সাকুল্যে এক হাজার। আর সাধারণ দিনে প্রায় সতেরোশো মিনিবাস চললেও এ দিন রাস্তায় নেমেছে শ’পাঁচেক।
পর পর চারটে কাজের দিনে গণপরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কার মুখেও সরকার অবশ্য তার অবস্থান থেকে সরছে না। বাস ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটা হবে না বলে এ দিনও ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। যা দেখে বাস মালিকেরা বলছেন, চার দিনেই দুর্ভোগের ইতি ঘটবে না সাধারণ যাত্রীদের। বরং সরকারের এই মনোভাব বজায় থাকলে পুজোর পরে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত উঠে যাবে। |
প্রতীক্ষা। মঙ্গলবার উল্টোডাঙা মোড়ে। ছবি: সুমন বল্লভ। |
ডিজেলের দাম এবং আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে বাস মালিকদের সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, গত এক বছরে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাসভাড়া বাড়েনি। ফলে বাস চালিয়ে এখন লাভের মুখ দেখা তো দূরঅস্ৎ, লোকসান সইতে হচ্ছে। এই অবস্থায় এ রাজ্যে চলা বেসরকারি বাসের ৩০ শতাংশই বসে গিয়েছে বলে বাস মালিকদের দাবি।
এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, “সরকার ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় থেকে রাজ্যের পরিবহণ শিল্প ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই অবস্থায় ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই।” ১৯ ও ২০ তারিখের সেই ধর্মঘটে কাজ না-হলে পুজোর পরে যে কার্যত হাতে গোনা বাস চলবে, সে কথাও আগাম জানিয়ে রেখেছেন বাসমালিকেরা।
কিন্তু ভাড়া বাড়ানো যে সরকারের ভাবনার মধ্যে নেই, তা ইতিমধ্যে একাধিক বার জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। এ দিনও সেই ইঙ্গিত দিয়ে ধর্মঘটী বাস মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি, ধর্মঘট মোকাবিলায় সরকার পরিবহণ সংগঠনগুলির মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। এবং সে কাজে তারা কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। ধর্মঘট থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসক দল প্রভাবিত বাস-মালিক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট। যদিও সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার নিজেই কবুল করছেন যে, ভাড়া না-বাড়ালে রাস্তায় বাসের সংখ্যা ক্রমশ কমবে। তাঁর কথায়, “পুজোর পরে সরকার ভাড়া না-বাড়ালে রাস্তা থেকে এমনিই বাস কমে যাবে। আলাদা করে ধর্মঘট ডাকার প্রয়োজন হবে না।” |