পুকুর ভরেছে পদ্মে। পদ্মর ভাল বাজারও এসেছে। অথচ চাষির মুখে হাসি তো দূরের কথা উল্টে রাতের ঘুম উধাও হওয়ার জোগাড়। জঙ্গিপুর ব্লকের প্রায় পনেরোটি গ্রামের চাষিরা জানাচ্ছেন, শেষ বর্ষায় ভাল বৃষ্টি হয়েছে। পুকুরগুলো জলে ভরে যাওয়ায় পদ্মও এবার ভাল হয়েছিল। কিন্তু দুর্গা পুজো পযর্ন্ত পদ্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। পদ্মচাষি হিরু ভুঁইমালি, অলক ফুলমালি, ফুর্তি ভুঁইমালিদের কথায়, “গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মে শুঁয়োপোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মের পাতা। এখন বৃষ্টি না হলে এই অত্যাচার আরও বাড়বে। এদিকে পুকুরের মাছ মরে যাবে বলে শুঁয়োপোকা মারতে কীটনাশকও দিতে পারছি না। বুঝতে পারছি না আমাদের করণীয় কি।”
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের ১৫ টি গ্রাম ছাড়াও খরগ্রাম, সাগরদিঘির কিছু পুকুরে পদ্ম চাষ হয়। চাষিরা একক উদ্যোগে এই চাষ করেন। চৈত্র মাসের শেষ থেকে আশ্বিন মাস, এই ছ’মাস পদ্মের চাষ হয়। জঙ্গিপুর এলাকার পদ্মা স্থানীয় বাজারগুলোর পাশাপাশি বহরমপুর, কৃষ্ণনগর ও হাওড়াতেও যায়। এই চাষে পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও হাত লাগান। চাষে তেমন কোনও খরচ নেই। ফলে পুকুর পদ্মে ভরে গেলেই উৎসবের দিনগুলোতে বাড়তি দুটো পয়সার মুখ দেখেন চাষিরা।
এলাকার পদ্মচাষিরা বলছেন, “বিশ্বকর্মা পুজোয় আমরা পদ্ম বিক্রি করে ভাল আয় করেছি। এবার যা পদ্ম হয়েছিল তাতে দুর্গাপুজো পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকতাম। কিন্তু বাধ সাধল শুঁয়োপোকা। পুকুরে যেমন পদ্ম আছে, তেমনি মাছও তো আছে। তাই মাছ মরে যাবে বলে কীটনাশকও দিতে পারছি না। এমন অবস্থায় কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু এটা উদ্যান পালন দফতরের বিষয় বলে হাত গুটিয়ে নিয়েছে কৃষি দফতর। এদিকে উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করতে পারিনি। এখনই কোনও ব্যবস্থা না হলে দুর্গা পুজোতে পদ্মের সঙ্কট দেখা দেবে।”
রাজ্যের কোথাও কোথাও পদ্মফুলের জন্যই হিমঘর রয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদে সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই। উদ্যান পালন দফতরের উপ অধিকর্তা শুভদীপ নাথ বলেন, “বহরমপুরের হিমঘরে সামান্য কিছু পদ্মফুল সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। কিন্তু হিমঘরে পদ্ম রাখার বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া আছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া চাষিদের পক্ষে সেটা করা সম্ভব নয়। শুঁয়োপোকার আক্রমণ থেকে পদ্মকে বাঁচাতে নিম জাতীয় কীটনাশক গাছে ও পুকুর পাড়ের ঝোপজঙ্গলে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে ছাইয়ের সঙ্গে কেরোসিন মাখিয়েও যদি পদ্ম পাতায় দেওয়া যায় তাহলেও সুফল পাওয়া যাবে।” কিন্তু কীটনাশক দিয়ে কতটা সমস্যা মিটবে তা নিয়ে দ্বিধায় আধিকারিকরা।
উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে পদ্মফুল যাতে হিমঘরে রাখা যায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।” |