পুজোর সময়। এমনিতেই যানজটের ফাঁসে হাঁসফাঁস করা নবদ্বীপে ক্রমশ সমস্যা বাড়ছে। পুজোয় রাস্তঘাটে পসরা নিয়ে বসেন অনেক অস্থায়ী ব্যবসায়ী। তেমনই দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। এর মধ্যেই যানজটে রাস্তা আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্গীন।
মাস দুয়েক আগের কথা। নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে ঢোকার মুখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কার্যত কেঁদে ফেলেছিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রদীপ চৌধুরী। সকালের কাটোয়া লোকাল ধরে তিনি কলকাতার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রীর অপারেশনের জন্য টাকা জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বেলা একটার মধ্যে ওই হাসপাতালে টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীর অপারেশন পিছিয়ে যাবে। টাকা জোগাড় হলেও নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারেননি প্রদীপবাবু। সৌজন্যে নবদ্বীপের যানজট। পেশায় ব্যবসায়ী প্রদীপবাবু বলেন, “স্টেশনে ঢোকার মুখে রিকশা, ট্রলি এবং বাসে এমন ভাবে জট পাকানো ছিল কোনও মতে স্টেশনে যাই। কিন্তু টিকিট কেটেও শেষ পর্যন্ত ট্রেনটা ‘মিস’ হল।”
ঘটনা-২: রাশিয়া থেকে নবদ্বীপের মঠে এসেছিলেন এক দম্পত্তি। নবদ্বীপে বেশ কিছু দিন থাকার ইচ্ছে নিয়ে তাঁরা দীক্ষাও নিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে এক রবিবারের সন্ধ্যায় তাঁরা নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় আসেন। পোড়ামাতলার চেনা যানজটে প্রায় দেড় ঘন্টা আটকে ছিলেন তাঁরা। রাশিয়া থেকে নবদ্বীপে এসে ভিড় ও যানজটের বহর দেখে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শহর ছাড়েন ওই দম্পতি।
বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপে বেড়াতে এসে পথচারী, পর্যটককে খুঁজতে হয় নিরাপদে চলার রাস্তা। রিকশা-ভ্যান রাস্তা দখল করে রাখে। নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “রাস্তা তো এখন সবার জন্য নয়। রাস্তার দখল নিয়েছে অন্যরা। মানুষের হাঁটার দরকার কি?”
নবদ্বীপে উৎসব সারা বছরই লোকজন আসেন। শহরের রেল স্টেশন বিষ্ণুপ্রিয়া থেকে পূর্বমুখী প্রায় দু’ কিলোমিটার রাস্তা এখন নবদ্বীপের মেরুদণ্ড। রাস্তাটির দু’টি ভাগ। বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট থেকে পোড়ামাতলা প্রায় এক কিমি। অন্যটি পোড়ামাতলা থেকে ঘেরাঘাট এক কিমির কিছুটা বেশি। সকাল ৯টা থেকে শহরে যাতায়াত শুরু হয়। ওই লোকজনের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। আপ, ডাউনের ট্রেন থামলে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়ে নবদ্বীপ শহরের মধ্যে। এদের সকলেরই আসা যাওয়ার এই একটি মাত্র রাস্তা। বেলা বাড়তেই বাড়ে যানজটও।
নিত্য এই যানজটে ক্ষতি হচ্ছে নবদ্বীপের বাণিজ্য-অর্থনীতিতে। নবদ্বীপের রেডিমেড ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোহন রায় বলেন, ‘‘ যানজটের কারণে বহিরাগত ক্রেতারা বিরক্ত হচ্ছেন। তারপরেও যাঁরা প্রতিদিন আসছেন তাঁদের যদি যানজটে ৫০ মিনিট আটকে থাকতে হয় কিংবা ট্রেন ‘মিস’ করতে হয়, তবে তাঁরা কেন আসবেন?”
নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরের প্রধান রাস্তায় যে যা খুশি করছে। ট্র্যাফিক পুলিশ নিষ্ক্রিয়। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই যেখানে সেখানে তৈরি হয়েছে রিক্শা ও ট্যাক্সির স্ট্যান্ড।”
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “রাস্তার অধিকার সকলের। কেউ নিজের কাজে ব্যবহার করে বাকিদের সেই অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। ব্যস্ততার সময়ে রাস্তার উপর লরি থেকে মাল খালাস কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না”
বছর দুয়েক আগে যানজট কমাতে পথে নেমেছিলেন পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তিনি রাস্তার বেআইনিভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সাইকেল, মোটর সাইকেলের চাকা থেকে হাওয়া খুলে দিতেন। তাতে সাড়াও মিলেছিল খুব। পরে অবশ্য নবদ্বীপ ফিরে আসে নবদ্বীপেই। বিমানকৃষ্ণবাবু বলেন, “পুজোর আগে আবার পথে নামব। নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতু থেকে ফাঁসিতলা পর্যন্ত একটি দীর্ঘ বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা পাশ হয়েছে। তাতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা খরচ হবে। ওই বাইপাস হয়ে গেলে নবদ্বীপের যানজট অনেকটা কমে যাবে।” |