১৯৮৩, ২০০৮, ২০০৯। তিন-তিন বার ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল। অবশেষে ‘চোকার্স’ বদনাম ঘুচিয়ে সুব্রত কাপের অনূর্দ্ধ-১৪ বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হল কালনার কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার বরানগর স্পোটিং ক্লাবের মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তাঁরা হুগলির বৈদ্যবাটি বিদ্যানিকেতনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয়। দু’টি গোল করেছেন সৌরভ সর্দার ও একটি গোল করেছেন তন্ময় দাস।
কালনা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কালনাই নয়, সুব্রত কাপের কোনও বিভাগে এই প্রথম বর্ধমানের কোনও স্কুল চ্যাম্পিয়ন হল। স্কুল ভিত্তিক এই ফুটবল প্রতিযোগিতার অনূর্দ্ধ-১৭ বিভাগেও এই স্কুলটি তৃতীয় স্থান পেয়েছে। কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনন্দ টাট বলেন, “এই জয়ের ফলে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার জাতীয় স্তরে আমাদের স্কুল বাংলার প্রতিনিধিত্ব করবে।” |
কী ভাবে এল জয়? স্কুল ও মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের প্রথম থেকেই সুব্রত কাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিল তারা। প্রতিযোগিকার শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য ছিল কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মহকুমা বিভাগে কালনারই রাজ স্কুলকে ৩-০ গোলে হারানোর পর জেলা বিভাগে মেমারির একটি স্কুলকে হারায় তারা। পরের পর্যায়ে ক্লাস্টার বিভাগে (জোন) বীরভূম জেলা স্কুলকে ৬ গোলে চূর্ণ করার পর নদিয়ার একটি স্কুলকে হারায় ৪-১ গোলে। গোটা প্রতিযোগিতায় এই একবারই গোল খেয়েছে কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জমাট রক্ষণ। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাজ্য বিভাগে উঠে নক আউট পর্যায়ের প্রথম খেলায় শিলিগুড়ি সেন্ট পিটার হাইস্কুলকে ৩-০ গোলে হারায় তারা। সেমিফাইনালে হারায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন উত্তর ২৪ পরগণার কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরকে।
ফাইনালে হুগলির বৈদ্যবাটি বিদ্যানিকেতন প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন ছিল। তার উপর ছিল অতীতে ফাইনালে উঠে হারের রেকর্ড। তাই খেলার শুরু থেকেই সাবধানী ছিল কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। স্কুলের কোচ ও ক্রীড়া শিক্ষক সৌমিত্র হাজরা জানান, প্রথম গোলটিই ম্যাচের সেরা। মাঝমাঠ থেকে ভেসে আসা একটি বল ধরে বৈদ্যবাটির রক্ষণের চার জনকে ঘাস ধরিয়ে গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে গোলটি করেন তন্ময় দাস। খেলার বয়স তখন ৬ মিনিট। এরপরই খেলার রাশ চলে যায় কৃষ্ণদেবপুরের হাতে। ১৮ মিনিটেই দ্বিতীয় গোল। সাইড লাইনের গা ঘেঁসে ঠিকানা লেখা একটি বল ধরে গোলটি করেন সৌরভ সর্দার। দু’টি গোল খাওয়ার পর পাল্টা আক্রমণে যেতে শুরু করে বৈদ্যবাটির স্কুলটি। তবে গোলের মুখ খুলতে পারেনি। খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে সৌরভ।
বর্ধমানের স্কুলের এই সাফল্য খুশি জেলার প্রাক্তন ফুটবলাররা। প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার সুবীর ঘোষ বলেন, “কালনার স্কুলের এই সাফল্য জেলার ফুটবলারদের উৎসাহিত করবে।” বাংলা জয় সমাপ্ত। এ বার অপেক্ষা ভারত জয়ের। |