প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে ঘর ছেড়েছিলেন বধূ। পরে স্বামীর অনুরোধে ফিরেও আসেন। অতীত ভুলে দু’জনেই নতুন করে সংসার পাততে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সহ্য হয়নি গ্রামের কিছু লোকের। তাদের মদতদাতা ছিল বধূর ঘনিষ্ঠ সেই যুবকই। বাড়িতে চড়াও হয়ে গালমন্দ করে তারা। যার জেরে ১৯৯৬ সালের ২২ এপ্রিল আত্মঘাতী হন ওই বধূ।
বধূটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে মঙ্গলবার ১১ জনকে কারাদণ্ড দেন উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বীজেন্দ্রনাথ রায়বর্মণ। মৃত মহিলার ঘনিষ্ঠ ব্রজগোপাল রায় সাজাপ্রাপ্তদের অন্যতম।
সমাজের নৈতিক মান ধরে রাখার নামে সালিশিসভা বসিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকাদের গণপিটুনি বা নিগ্রহের ঘটনা শোনা যায়। মামলার সরকারি আইনজীবী নবেন্দু দে জানান, এই মামলার সাজা ঘোষণার সময়ে বিচারক মন্তব্য করেছেন, গ্রামে এক দল মানুষ আইন-শৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এই সামাজিক অবক্ষয় রুখতে এই সাজা সাহায্য করবে।
ওই বধূর বাড়ি বাউড়িয়ার চককাশীতে। মাসখানেক প্রতিবেশী ব্রজগোপালের সঙ্গে কাটানোর পরে স্বামীর অনুরোধে বাড়ি ফেরেন তিনি। পুলিশ জানায়, ওই রাতেই বাড়িতে চড়াও হয় কয়েকজন। দাবি জানায়, সালিশিসভা বসিয়ে বিচার হবে মহিলার। রাজি হননি বধূটির স্বামী। দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ে হামলাকারীদের হাতে-পায়ে ধরে বলে, “মাকে সুস্থ ভাবে থাকতে দাও।” পর দিন সকালে ফের বাড়িতে চড়াও হয় কিছু লোক। বলে, মহিলার বেঁচে থাকারই অধিকার নেই। গোলমাল চলাকালীন ঘরে ঢুকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন ওই বধূ।
১৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন স্বামী। এ দিন ব্রজগোপাল, দীনবন্ধু মণ্ডল, বরুণ দাস, মনোজ পাল, কালীচরণ কর্মকার, মদন পাল, উত্তম দাস এবং প্রদীপ দত্তকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। প্রতিমা মালাকার, বুলন মালাকার, শান্তি দেবনাথ নামে তিন মহিলাকেও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন তিনি। সাজাপ্রাপ্তেরা সকলেই এত দিন জামিনে মুক্ত ছিলেন। মহিলার স্বামী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। শাস্তির খবর পেয়ে তিনি খুশি। বললেন, “স্ত্রীকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। তবুও ওরা ওকে বাঁচতে দিল না।”
|