সম্পাদকীয় ২...
উন্নয়নের নামে
র্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলিয়া দাবি করে। সাচার কমিটির রিপোর্টের পরেই সংখ্যালঘুদের দুরবস্থা সম্পর্কে এই সরকার কিছুটা সজাগ হইয়া ওঠে। ওই রিপোর্টে যেহেতু দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী মুসলিমদের অবস্থা দলিতদের অপেক্ষাও সঙ্গিন বলিয়া বর্ণনা করা হয়, তাই তাঁহাদের উন্নয়নে কিছু কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কর্মসূচি রূপায়ণের হাল? একটি রিপোর্টে দেখা যাইতেছে, দেশের মুসলিম-অধ্যুষিত ৯০টি জেলাকে বাছিয়া যে-সব প্রকল্প গৃহীত হইয়াছিল, তাহাদের অনেকগুলির সুফলই মুসলিমরা পান নাই, প্রায়শ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী (যাঁহাদের আর্থিক অবস্থা উচ্চ বর্ণের হিন্দুর সমতুল) সে-সব হস্তগত করিয়াছে। কারণ হিসাবে প্রকল্প রূপায়ণে ভারপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের শৈথিল্যকে শনাক্ত করা হইয়াছে। অভিযোগ, কেবল অনিচ্ছাকৃত শৈথিল্য নয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে অনেক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের বসবাসের এলাকায় প্রকল্পগুলি চালান করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
সমীক্ষকরা লক্ষ করিয়াছেন, মুসলিম-প্রধান এলাকায় মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ও কলেজ-শিক্ষার প্রসার ঘটানোর পরিবর্তে মাদ্রাসার আধুনিকীকরণে ঢালাও অনুদান দেওয়া হইয়াছে, যেখানে মুসলিম পড়ুয়াদের মাত্র চার শতাংশ মাদ্রাসায় পড়িতে যায়। ফলে খাতায়-কলমে সংখ্যালঘুদের শিক্ষাবিস্তারের ঢক্কানিনাদ নির্ঘোষিত হইলেও কার্যত তাঁহাদের একটি অনগ্রসর, মধ্যযুগীয় শিক্ষাক্রমে আটকাইয়া পিছাইয়া দেওয়া হইতেছে। প্রয়োজন কিন্তু তথাকথিত সংখ্যালঘু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারি ভর্তুকি দেওয়া নয়, বরং তাহার বাহিরে মুসলিমদের টানিয়া আনিতে তাঁহাদের বসবাসের এলাকায় মূলস্রোতের শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নত করা। আসলে কীসে সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন হইবে, সে সম্পর্কে প্রথাগত ধ্যানধারণার কূপমণ্ডূকতার মধ্যেই আটকা পড়িয়াছে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক। নূতন করিয়া ভাবার ইচ্ছা কিংবা তাগিদ তাহার নাই, সেই সাহস কিংবা কল্পনাশক্তিও নাই। মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়ন বলিতে তাঁহারা এখনও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার বুঝেন। কোনও কোনও রাজনীতিক এ ব্যাপারে আরও সরেস। তাঁহাদের ধারণা, শিক্ষার প্রসার নয়, ইমাম-মুয়েজ্জিনদের সরকারি ভাতা প্রদান করিলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতি হইবে।
ইহার বিপরীতে আছে সরকারি আধিকারিকদের মুসলিম-তোষণে অভিযুক্ত হওয়ার শঙ্কা। সংখ্যালঘুর উন্নয়নে বেশি তৎপর হইলে সমাজই তাঁহাদের তোষণকারী আখ্যা দিবে। একই কারণে প্রকল্প রূপায়ণের তহবিলও প্রায়শ অপ্রতুল, অন্তত ঘোষিত কর্মসূচির সহিত তাহার রূপায়ণের বরাদ্দ সমাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংখ্যালঘু উন্নয়নের সরকারি উদ্যোগ তাই এক দিকে যেমন দায়সারা, অন্য দিকে তেমনই নামমাত্র। এতটাই যে, শেষ পর্যন্ত উন্নয়নের সদিচ্ছা লইয়াই সংখ্যালঘুদের মনে সংশয় উপস্থিত। সংখ্যালঘুর বঞ্চনাবোধ স্বাধীনতার পর হইতে ক্রমশ বাড়িয়াই চলিয়াছে। লোকদেখানো কিছু ঘোষণা আর মৌখিক অঙ্গীকারের আড়ালে চাপা পড়িয়াছে সরকারি আধিকারিকদের অনীহা, ক্ষেত্রবিশেষে গোপন বা প্রচ্ছন্ন বিরোধিতাও। ইদানীং প্রায় সকল আঞ্চলিক দলও সংখ্যালঘুদের নিছক ভোটব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করিতে অতিমাত্রায় সক্রিয়। মুসলিমদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি করিয়া তাঁহাদের সমর্থ প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে বিকশিত করার বদলে ভোটব্যাংকের রাজনীতিই সার হইল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.