|
|
|
|
গানে শুভেচ্ছা মল্লিকার, জন্মদিনে সক্রিয় মোদী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
স্থান-কাল-পাত্রের বিচারে হয়তো কোনও তুলনাই নয়। তবু ৫১ বছর আগে দুনিয়া তোলপাড় করা ঘটনাটার সঙ্গে আজকের এক ঘটনার তুলনা হাল্কা মেজাজেই এসে পড়ছে।
১৯ মে, ১৯৬২। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্মদিনের পার্টিতে মেরিলিন মনরো গেয়েছিলেন, “হ্যাপি বার্থডে... মিস্টার প্রেসিডেন্ট।’
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩। টিভি সাক্ষাৎকারে মল্লিকা শেরাওয়াত গেয়ে উঠলেন, “হ্যাপি বার্থডে নরেন্দরজি...।” গানটান গেয়ে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে তাঁর ৬৩তম জন্মদিনে ভারতের ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলার’ অ্যাখ্যাও দিলেন অভিনেত্রী। |
|
বাহার। শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছে হরেক কিসিমের পাগড়ি।
জন্মদিনে সেগুলিই পরে দেখছেন মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স |
শুধু মল্লিকাকে আর দোষ দেওয়া কেন। নরেন্দ্রভাই মোদীর জন্মদিন ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা দিনভর যে ভাবে উৎসবে মেতে রইলেন, একমাত্র অটলবিহারী বাজপেয়ী ছাড়া আরও কোনও বিজেপি নেতার জন্মদিনে তেমন দেখা গিয়েছে কি না সন্দেহ। দিল্লির নেতা বিজয় গয়াল ফি-বছর বাজপেয়ীর জন্মদিন পালন করেন। আজ তিনি দিল্লির হনুমান মন্দিরে যজ্ঞ করলেন। ১০১ কেজির লাড্ডু বিতরণ করলেন। যে কেরলে বিজেপি দাগ কাটতে পারেনি, সেখানেও মোদীর জন্মদিন পালন হল ঘটা করে। মোদীর রাজ্যে দলের সংখ্যালঘু সমর্থকরা তাঁর জন্মদিন পালন করলেন ৬৪ কেজির কেক কেটে। মোদী নিজেও সকালে মায়ের আশীর্বাদ (টুইটারে জানান, গীতাও পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে) নেওয়ার পর সেই সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত জামালপুরেই পৌঁছে গেলেন।
সব দেখে অনেকেরই বিশ্লেষণ, জন্মদিনে সুকৌশলে সংখ্যালঘুদের কাছে টানায় আরও মন দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সে আরএসএস তাঁকে দিয়ে যতই হিন্দুত্ব করাতে চাক না কেন। দলের সংখ্যালঘু সেলের উদ্যোগে মুসলিমদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর নতুন উদ্যোগেরও সূচনা হয় এ দিন। গুজরাত বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের প্রধান মেহবুব আলি বাভার বক্তব্য, “মোদীর জন্মদিনকে ঘিরে আমরা সংখ্যালঘুদের দলে যোগ দেওয়ানোয় উদ্যোগী হয়েছি। প্রায় চল্লিশ হাজার মুসলিম দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।” |
|
টিভিতে মল্লিকা শেরাওয়াত গাইলেন “হ্যাপি বার্থডে নরেন্দরজি।” মঙ্গলবার। |
বিজেপির শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, আরএসএস অবশ্যই মোদীকে হিন্দুত্বের ভাবনা উস্কে দিতে বলেছে। মোদী সে পথ থেকে আদৌ সরে আসেননি। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার তিনি স্বাভাবিক ভাবেই চেষ্টা করবেন যাবতীয় অপবাদ ঘুচিয়ে রাষ্ট্রনায়কের ভাবমূর্তি গড়তে। যে কারণে দু’দিন আগে হরিয়ানার সভায় গিয়ে আকস্মিক ভাবেই পাকিস্তানকে নরম বার্তা দিয়েছিলেন। আবার নিজের সংখ্যালঘু বিরোধী অপবাদ ঘোচানোরও দায় রয়েছে তাঁর। যে আমেরিকা তাঁর ভিসা আটকে রেখেছে, তাদের মোদী দেখাতে চান, তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষেই এগোতে ইচ্ছুক। বিজেপির এক নেতার কথায়, “রাহুল গাঁধী থেকে মুলায়ম সিংহরা যখন সংখ্যালঘু তোষণ করছেন, তখন বিজেপির সংখ্যালঘু ভোটের প্রত্যাশা না থাক, অন্তত দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে দেখাতে হবে, তিনিও ‘প্যান ইন্ডিয়া’র ভাবনা নিয়ে চলেন।” |
|
জন্মদিনে মায়ের আদর। ছবি: এএফপি |
তবে আজ মোদী যখন সংখ্যালঘুদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন, তখন তখন তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ দিল্লিতে সভাপতি রাজনাথ সিংহের বাড়িতে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছেন উত্তরপ্রদেশে মোদীর জন্য জমি তৈরির রণকৌশল নিয়ে। আজকের বৈঠকে স্থির হয়েছে, মোদী অন্তত আটটি সভা করবেন উত্তরপ্রদেশে। তার জন্য গোটা রাজ্যকে আটটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তা হলে চেষ্টা করা হবে অক্টোবরের মধ্যেই প্রথম সভাটি করে ফেলার। মুজফ্ফরনগরের ঘটনার পর যখন দেশের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মেরুকরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন স্বভাবতই বিজেপি সেখানে ফায়দা তুলতে চাইছে।
কিন্তু মোদীর দিক থেকেও সচেতন প্রয়াস থাকছে, যাতে তাঁর নাম ঘিরে নতুন করে মেরুকরণের রাজনীতি না হয়। যাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলি হারিয়ে না যায়। তবে মোদীর সচিবালয় সূত্রের খবর, আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছ থেকেও শুভেচ্ছাবার্তা এসেছে। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লতা মঙ্গেশকরও। বিজেপি সূত্রের খবর, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করায় যাঁর আপত্তি ছিল সব চেয়ে তীব্র, সেই লালকৃষ্ণ আডবাণীও আজ ফোন করেছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে। টুইটারে সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। আর মুখে বলেছেন, “আমার বিশ্বাস, জনতার আশীর্বাদ বিফলে যায় না।”
|
পুরনো খবর: আপত্তি চেপে মোদীর প্রশংসায় আডবাণী |
|
|
|
|
|