বিধি মেনেই পথে মণ্ডপ, দাবি উদ্যোক্তা ও পুলিশের
রূপচাঁদ মুখার্জি লেন সর্বজনীন দুর্গোৎসব। মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে কয়েক জন শ্রমিক তৈরি করছিলেন পুজোর মণ্ডপ। সেই জন্য বন্ধ গোটা রূপচাঁদ মুখার্জি লেন। এস পি মুখার্জি রোড থেকে কোনও গাড়ি ঢুকতে পারছে না সেখানে।
এলাকার এক বৃ্দ্ধ বাসিন্দার অভিযোগ, প্রতি বছর পুজোর আগে থেকে ওই রাস্তা প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ থাকে। বাসিন্দারা উৎসবের স্বার্থে এটা মেনেও নিয়েছেন। ওই পুজো কমিটির সভাপতি, পূর্ত ও পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। পুজো কমিটির সম্পাদক সৌমিককুমার মিত্রের দাবি, প্রতিবারের মতো এ বারও তাঁরা আদালতের নির্দেশ মেনেই পুজো করছেন এবং রাস্তাটি বন্ধ থাকলেও কারও অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ, পাশের রাস্তাটি খোলা রয়েছে।
পদ্মপুকুর বারোয়ারি সমিতি। পদ্মপুকুর রোডে ওই পুজোর উদ্যোক্তারা তিন রাস্তার মোড়ে পথের বেশির ভাগ অংশ আটকে মণ্ডপ তৈরি করছেন। রাস্তার এক পাশ দিয়ে ছোট গাড়ি চলছে সেখানে। ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে গড়িয়াহাটে ফিরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অমিত সাউ। মঙ্গলবার তিনি জানান, ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা। না হলে রাস্তার এতটা অংশ আটকে পুজোমণ্ডপ তৈরির জন্য যানজটে আটকে থাকতে হয় বহুক্ষণ।
একডালিয়া এভারগ্রিন। ত্রিধারা সম্মিলনী।
ত্রিধারা পুজো কমিটির মূল উদ্যোক্তা মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার। প্রতিবারের মতো রাস্তার একাংশ আটকে তৈরি করা হচ্ছে ত্রিধারার পুজোমণ্ডপ। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনেই পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা গাড়ি চলাচলের জন্য ১০ ফুটেরও বেশি জায়গা খোলা রেখেছেন।
দক্ষিণের সঙ্গে উত্তরের ভিড়ের লড়াইয়ে প্রতি বার দক্ষিণকে এগিয়ে রাখে গড়িয়াহাটের একডালিয়া এভারগ্রিন। প্রতিবারের মতো এ বারও তারা রাস্তার এক পাশ আটকে মণ্ডপ তৈরি করছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মতো উদ্যোক্তারা ১০ ফুটের বেশি রাস্তা খোলা রেখেছেন যান চলাচলের জন্য। এমনকী, রাস্তার ওই খোলা অংশ দিয়ে স্কুলের বাসও চলাচল করছে বলে পুলিশের দাবি। একডালিয়া এভারগ্রিনের সর্বময় কর্তা, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “৭০ বছর ধরে ওই পুজো চলছে। রাস্তা বন্ধ করে পুজো করা হয় না। লরি চলার মতো জায়গা রেখে তবেই মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।”
উত্তর কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের রামমোহন সন্মিলনী গত কয়েক বছর ধরেই বড় পুজো করে এসেছে। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত সাংসদ কুণাল ঘোষ। অভিযোগ, আদালতের অনেক নিয়মই মানেনি ওই পুজো কমিটি। পুলিশ সূত্রের খবর, ১০ ফুটের বদলে মাত্র সাত ফুট রাস্তা ছেড়ে মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশকে পুরো বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে সেখানে।
নলিন সরকার স্ট্রিট।
হাতিবাগানের শিকদার বাগান সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটি গোটা রাস্তাটাই আটকে এ বারের মণ্ডপ তৈরির কাজ করছে। ওই পুজো কমিটির চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “মাননীয় বিচারপতিকে সম্মান জানিয়ে বলছি, তিনি কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামজিক পরিস্থিতি এবং এখানকার দুর্গাপুজো সস্পর্কে হয়তো যথেষ্ট অবগত নন।” তাঁর দাবি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নাগরিক হিসেবেই কোনও না কোনও পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলবার হাতিবাগানে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সিঁথির জাহানারা খাতুন। রাস্তা বন্ধ করা সমর্থন না করলেও বছরের ওই কয়েকটা দিন বড় পুজোর ক্ষেত্রে এমন ছাড় দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি।
নলিন সরকার স্ট্রিট পুজো কমিটির মণ্ডপ তৈরির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। দু’পাশে চার ফুটের ফুটপাথ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। পুজোর সভাপতি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “আদালতের সব নির্দেশ মেনেই পুজোমণ্ডপ তৈরি করছি।”
এর পাশাপাশি, মদন চ্যাটার্জি স্ট্রিটে আদালতের নিয়ম না মেনে পুজো করছে সাত-এর পল্লি পুজো কমিটি। শ্যামপুকুর থানার সামনেই রাস্তা আটকে তৈরি হয়েছে অন্য একটি পুজোর বাঁশের খাঁচা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখন ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করলেও পুজোর আগেই পুরো বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই রাস্তা। কৈলাস বসু স্ট্রিট, ভবানীপুরের টাউনসেন্ড রোড, বকুলবাগান-সহ একাধিক জায়গায় রাস্তার একাংশ আটকে মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চালু নির্দেশিকা
• ১৫ ফুট চওড়া রাস্তার ক্ষেত্রে ৪ ফুট জায়গা ছাড়তে হবে।
• ১৫-৩০ ফুট চওড়া রাস্তার ক্ষেত্রে ছাড়তে হবে ৬ ফুট।
• ৩০ ফুটের বেশি চওড়া রাস্তার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ ফুট।
• মণ্ডপের উচ্চতা কোনও ভাবেই ৪০ ফুটের বেশি হবে না।
• ঢোকা ও বেরোনোর গেট কমপক্ষে ১২ ফুট বাই ১৪ ফুট। দমকল যাতে ঢুকতে পারে।

ছবি: রণজিৎ নন্দী ও দেবস্মিতা চক্রবর্তী
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.