ছোটদের মনেই ভোঁ-কাট্টা ঘুড়ি |
নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে লাল, সবুজ, নানা রঙের ঘুড়ি। তাদেরই একটা অন্যটার গা ঘেঁসে সাঁ করে বেরিয়ে গেল। পরক্ষণেই সেই ঘুড়ি ফিরে এসে এক ঝটকায় কেটে দিল সেই ফস্কে যাওয়া সেই ঘুড়িটাকে। সঙ্গে সঙ্গে ভোঁ-কাট্টা বলে লাফিয়ে উঠল মিত্তির বাড়ির ছাদের ছেলেগুলো।
বিশ্বকর্মা পুজোর এই চেনা ছবিটা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। শহরের মতো গ্রামেও এখন ঘুড়ির সঙ্গে আকাশে ভেসে বেড়ানোর বিলাসিতা ছোটদের মধ্যে দেখা যায় না। তাই বিশ্বকর্মা পুজোয় নিজেদের ছেলেবেলার কথা ভেবে মন খারাপ প্রবীণদের।
আজ যাঁরা খুব রাশভারি মাস্টারমশাই, কিংবা দুঁদে পুলিশ অফিসার অথবা বলিয়ে কইয়ে রাজনীতিবিদ, তাঁরা যে এক সময় লাটাই হাতে ভোঁ-কাট্টার নেশায় স্কুল পালিয়ে মাঠে-ঘাটে ঘুড়ি উড়িয়েছেন ভাবাই যায় না। সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের স্মৃতিতে এখনও তাজা, “আমাদের সময়ে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর খুব একটা চল ছিল না। বিশ্বকর্মা পুজো শেষ হলেই শহরের বাজার থেকে গ্রাম-গঞ্জের দোকানে ঘুড়ি আসত। তখন সেই ঘুড়ি নিয়েই ক’দিন ধরে আমাদের মাতামাতি চলত। এমন দিনও গিয়েছে, যে দিন ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরে এ নিয়ে বড়দের কথাও শুনতে হয়েছে।” লাভপুরে বড় ব্যবসায়ী তথা নাট্যকর্মী মহাদেব দত্তেরও একই অভিজ্ঞতা। সাঁইথিয়ার ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ ও নানুরের ওসি চয়ন ঘোষ বলেন, “ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে কতবার বড়দের বকা খেয়েছি। কিন্তু ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা ছাড়াতে পারিনি।”
আবার নানুরের সম্পন্ন কৃষক ফটিক গড়াই, ময়ূরেশ্বরের রাতমার বিজেপি নেতা তুষার দত্তদের ঘুড়ির ওড়ানোর অভিজ্ঞতাও কম রঙিন নয়। তাঁরা জানান, ছেলেবেলায় খবরের কাগজ আর নারকেল পাতার কাঠি দিয়ে তাঁরা ঘুড়ি তৈরি করতেন। তার পর মা-কাকিমাকে লুকিয়ে সেলাইয়ের কৌটো থেকে লুকিয়ে সুতো চুরি করে লাটাইয়ে পাকিয়ে ফেলতেন। ভাতের ফ্যান, কাচের গুড়ো, সাগুর আঠা দিয়ে সেই সুতোই হয়ে উঠত বিপক্ষের ঘুড়ির মারণঅস্ত্র। নস্টালজিয়া থেকে ভেসে উঠে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁদের। মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মন ভাল ছিল না নানুরের স্টেশনারি দোকানের মালিক তারক ঘোষ, পাড়িয়া মোল্লা, আমোদপুরের জয়ন্ত দাসদের। আক্ষেপ করছিলেন, “তখন নানা রঙের ঘুড়িতে দোকান সাজিয়ে রাখতাম। ছোটরা পিলপিল করে এসে কিনে নিয়ে যেত। কয়েক দশকে ছবিটা একেবারে বদলে গিয়েছে।” |