দরকার মাত্র তিন কাঠা জমি। কিন্তু নেই সেটাও। কোথাও গাছতলা, কোথাও পুকুরপাড়ে বসে রয়েছেন কচিকাঁচারা। বর্ধমান জেলার অর্ধেকেরও বেশি শিশু বিকাশ প্রকল্প বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের (আইসিডিএস) ক্লাস চলছে এ ভাবেই।
বর্ধমান জেলা শিশু বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রায় ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরই নিজস্ব কোনও ঘর নেই। বেশিরভাগই চলে খোলা আকাশের নীচে। কোথাও কোথাও কেন্দ্রগুলি চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয় ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার কিংবা কারও ব্যক্তিগত বাড়িতে।
প্রয়োজনীয় জমি না মেলাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির ঘর না থাকার অন্যতম কারণ। নিয়ম অনুযায়ী, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি তৈরি করতে গেলে তিন কাঠার মতো জমির প্রয়োজন। তবে, সেই জমি কোনওভাবেই অধিগ্রহণ করা যাবে না। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নামে দাতাকে জমি দান করতে হবে। সমস্যাটা এখানেই। গ্রামের দিকে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের জন্য জমি দান করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা পরিবার মিললেও শহরে জমিদাতা পাওয়া যায় না বললেই চলে। ফলে অনেক ক্ষেেকে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র তৈরির টাকা এলেও পড়ে থাকে ব্লক অফিসে। |
সমস্যার কথা স্বীকার করছেন সরকারি আধিকারিকেরা। বর্ধমান জেলার প্রকল্প আধিকারিক প্রভাস রায় বলেন, “বর্ধমান জেলায় ৯২৭৮ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ৫০ শতাংশেরই কোনও নিজস্ব ঘর নেই।”
কী অবস্থায় রয়েছে বর্ধমানের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রগুলি?
মঙ্গলকোটের আওগ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি বর্তমানে চলছে গাছের নিচে চাঁদোয়া টাঙিয়ে। আশেপাশে নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। অনেক সময় পুকুরের জল ব্যবহার করে কাজ চালাতে হয়। কাটোয়া ২ ব্লকের রোন্ডা, নতুনগ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে ব্যক্তিগত বাড়ির মধ্যে। অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর এলাকায় বেশিরভাগ অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের ঠিকানা ক্লাবঘর কিংবা কমিউনিটি সেন্টার। মঙ্গলকোটের মারতুবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা বেশ খারাপ।
নিজস্ব বাড়ি না থাকায় শুধু কচিকাঁচারাই নয়, সমস্যার পড়ছে কর্মীরাও। আইসিডিএস কর্মী জয়ন্তী গুহ, সাধনা হালদারেরা জানান, ঘর না থাকায় রান্নার উপকরণ, ওজন মাপার যন্ত্র-রাখায় সমস্যা হয়।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন মঙ্গলকোটের বিডিও সুশান্ত কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমি নিজে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখেছি। অবস্থা বেশ খারাপ।” ইউনাইটেড রাজ্য সরকারি আইসিডিএস সংগঠনের বর্ধমান জেলার নেত্রী ও কাটোয়া পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলার রীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোথাও খোলা জায়গা, কোথাও বা গোয়ালের পাশেই রান্না করতে হচ্ছে।” বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য সিপিএমের জয়তি চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বেশিরভাগ কেন্দ্রেই নূন্যতম পরিকাঠামো নেই। যে ভাবে রান্না করা হয় তাতে পুষ্টিকর খাওয়ার দেওয়া যায় কি না সন্দেহ। খাবার দূষিত হওয়ার সম্ভবনাও থাকে।”
তবে প্রশাসন সূত্রে শোনা গিয়েছে আশার কথা। বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান জেলার গ্রামীণ এলাকায় ও শিল্পাঞ্চলে ২০০টি করে নতুন অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন মিলেছে। প্রতিটি ঘর পিছু ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা খরচ হবে। আসানসোল-দুর্গাপুর এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আধিকারিক প্রভাস রায় বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিডিওদের থেকে জমি মিলেছে বলে অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করব।” |