গত বার তাঁর নেতৃত্বেই গুসকরা পুরসভা দখল করেছিল তৃণমূল।
রাজ্যে পরিবর্তনের তিন বছর আগে, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে তার প্রথম আঁচ আসারও আগে।
তৃণমূল গুসকরায় বোর্ড গড়লে তিনিই হয়েছিলেন পুরপ্রধান। পরে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের দায়ে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রায় দেড় বছর পরে তিনি দলে ফিরেছেন। আর ফের তাঁর নেতৃত্বেই গুসকরায় লড়তে নেমেছে শাসকদল। তিনি চঞ্চল গড়াই। এই ভোটে তাঁর চেয়ে বিতর্কিত চরিত্র সম্ভবত নেই। তাঁর মতো কামব্যাকও নেই।
চঞ্চলবাবু ভালই জানেন, তাঁর বিপদ ঘরে-বাইরে। বিরোধীরা দলেই রয়েছেন। প্রতিনিয়ত কারণে-অকারণে তাঁকে দুষেও চলেছেন। উন্নয়নের কাজ হয়নি বলে খোঁটাও দিচ্ছেন। গুসকরা টাউন তৃণমূলের সভাপতি নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই বলছেন, বাম আমলের পরে গুসকরায় আর পুর পরিষেবা সে ভাবে বেড়েছে কই? নিকাশি সমস্যা, পানীয় জল, সাফাই এবং নানা ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে চঞ্চলবাবুর বোর্ড শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ।
চঞ্চল অবশ্য এই সব অভিযোগ নিয়ে কোনও বাক্যব্যয় করেননি। বরং এগিয়ে দিয়েছেন একটি পুস্তিকা, যাতে পুর পরিষেবা নিয়ে সমস্ত কাজের ‘তথ্য’ ছাপা রয়েছে। দাবি করা হয়েছে, পুরসভা থেকে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের যে সমস্ত ভাতা দেওয়া হয়, নতুন পুরবোর্ডের আমলে প্রতিটির ক্ষেত্রেই প্রাপকদের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। |
গুসকরা পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ড ভেঙে ১৬টি হয়েছে। কিন্তু চঞ্চলবাবুর ওয়ার্ড ৯ নম্বর তাঁরই মতো অচঞ্চল। এলাকা পাল্টায়নি, জনবিন্যাসও না। কিন্তু সেই ওয়ার্ডে রাস্তার অবস্থা তো অজপাড়াগাঁকে মনে করিয়ে দেয়? নিকাশির অবস্থাও তথৈবচ? তা হলে ভোটারেরা ফের আপনাকে ভোট দিতে যাবেন কেন?
এত ক্ষণের অবিচলিত মুখটিতে এ বার একটু অস্বস্তির ছায়া খেলে যায়। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে চঞ্চল বলেন, “আমি শুধু আমার ওয়ার্ডের প্রধান নই, গোটা গুসকরার প্রধান। যতটুকু যা পেরেছি, সব ওয়ার্ডের জন্যই করেছি।” তাঁর দাবি, “আমাদের নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে দরকার বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা। সে জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। তবে পানীয় জলের সমস্যা মিটতে চলেছে।”
চঞ্চলবাবুর পুস্তিকা বলছে, ২০০৭ থেকে যে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল তা থেকে ৩, ৪, ৫, ৮, ৯, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জল সরবারাহের কথা। গত ৩০ মার্চ ৯ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জল সরবরাহ শুরু হয়ে গিয়েছে।
যা শুনে তিক্ত হাসছেন গুসকরার প্রাক্তন পুরপ্রধান, সিপিএমের বিনোদ চৌধুরী। তাঁর দাবি, “যেটুকু কাজ হয়েছিল তা আমার আমলে! চঞ্চলবাবু আর কোন নতুন প্রকল্পটা আনতে পেরেছেন? ওঁর হাঁটাচালা তো বাম আমলের জুতোয় পা গলিয়ে!” ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চঞ্চলবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএমের পার্বতীচরণ মিত্র বলেন, “চড়া দরে বাড়িতে পানীয় জল দেওয়া, সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া নিয়ে প্রচার চালাচ্ছি আমরা।” তাঁর অভিযোগ, “এলাকায় বোমাবাজি চলছে। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন না। তা পারলে চঞ্চলবাবুকে হারিয়ে প্রতিশ্রুতি পালন না করার বদলা নিতেন।”
কিন্তু মাঝখানে বহিষ্কৃত হওয়াটাও চঞ্চলবাবুর একটা বড় বাঁচোয়া হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী সুবীর করের দাবি, কাজের ব্যাপারে আমরা-ওরা মানেন না চঞ্চলবাবু। যে-ই সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে যায়, তিনি সমাধানের চেষ্টা করেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবনাথ গোস্বামী, ৭ নম্বরের সুলতা সাহা বা ৯ নম্বরের শেখ আমরুনের বক্তব্য, “কী করে উনি কাজ করবেন? অত দিন বহিষ্কার করে বসিয়েই রাখা হয়েছিল। ওঁকে পুরো পাঁচ বছর কি কাজ করতে দেওয়া হয়েছে?”
গত শনিবার গুসকরার বারোয়ারি তলায় সভা করতে এসে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও চঞ্চলবাবুকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়ে যান। তাঁর মন্তব্য, “আমি শুনেছি, গুসকরার পুরপ্রধান কাজ করতে চান। কিন্তু তাঁর পিছনে তাঁরই দল নন্দী-ভৃঙ্গী লাগিয়ে রেখেছে, যাতে উনি কিছুই করে উঠতে না পারেন।”
নিজের দলের লোকেরা পা টেনে ধরছে আর পিঠ চাপড়াচ্ছেন বিরোধী নেতা। চঞ্চল সম্ভবত জানেন, লক্ষ্মী সততই চঞ্চলা। |