নিমরতের অস্কার খিদে
ক দিকে সলমন রুশদি। অন্য দিকে কর্ণ জোহর। মাঝখানে একটা লাঞ্চবক্স। রীতেশ বাত্রা পরিচালিত ইরফান-নওয়াজ অভিনীত ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ ছবিটি দেখে সলমন রুশদি থেকে কর্ণ জোহর অভিভূত। এমনকী মাইকেল মুর-এর মতো পরিচালকও টেল্যুরাইড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবিটিকে তাঁর দেখা অন্যতম প্রিয় সিনেমা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে এ বছর ভারত থেকে মনোনীত অস্কার দৌড়ে থাকা ছবির তালিকায় আনন্দ গাঁধীর ‘শিপ অব থিসিয়াস’-কে জোর টক্কর দেবে ‘দ্য লাঞ্চবক্স’। ছবির অভিনেত্রী নিমরত কউর ‘শিপ অব থিসিয়াস’ নিয়ে কোনও কথা বলতে চান না। তবে তাঁর ছবিকে ঘিরে এই উন্মাদনার ঢেউয়ে গা ভাসাতে তাঁর আপত্তি নেই।
কে এই নিমরত? ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ইলা। স্বামী নওয়াজউদ্দিনকে রোজ ডাব্বাতে করে টিফিন পাঠান। আর এই টিফিন পাঠানো নিয়েই যত বিভ্রাট! ভুল করে ডাব্বা পৌঁছে যায় অভিনেতা ইরফানের কাছে। বাকিটা না হয় পরদার জন্য তোলা থাক...
এ বছরের গোড়ার দিকে নিমরত গিয়েছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানেও তাঁর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা। কেউ বলছেন আজকের দিনের চারুলতা, কেউ তাঁর অভিনয় শৈলীর সঙ্গে মধুবালার মিল পেয়েছেন। এর আগে তাঁর অভিনীত বসন্ত বালার ‘পেডলার্স’ সিনেমাটিও কান-এ দেখানো হয়েছিল।
দেশে অবশ্য নিমরত পরিচিত ক্যাডবেরি গার্ল হিসেবে। শহরের নানা হোর্ডিংয়ে এক সময় তাঁকে দেখা যেত বেশ দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে থাকতে। ঠোঁটে আলগা হাসি, গাড়িতে বসে কামড় বসাচ্ছেন ক্যাডবেরিতে।
কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল আর কুমার শানুর ‘তেরা মেরা প্যার’ নামের মিউজিক ভিডিয়োতে। হিন্দুস্থানি রাগসঙ্গীতের পোকা। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, উস্তাদ রাশিদ খান আর গিরিজা দেবীর ভক্ত। সুযোগ পেলেই মুম্বইতে ওঁদের কনসার্ট শুনতে চলে যান। বাবার আর্মিতে চাকরির সুবাদে ছোটবেলা কেটেছে দেশের বিভিন্ন শহরে। আজও ভালবাসেন ঘুরে বেড়াতে। তাঁর আর এক নেশা রাস্তার কুকুরকে বাড়িতে এনে পোষ মানানো।
নিমরত কউর
কর্মক্ষেত্রে এত প্রশংসা পেয়েও নিমরত প্রচারের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন। যখন অভিনেত্রীদের কানের দুল হারানোর শোকও খবর হয়, সেখানে নিমরত কেন সেই দৌড়ে নেই? উত্তরে বলছেন, “আমি মনে করি, ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। যদি ভাবি শুধু পুরনো অ্যাচিভমেন্ট নিয়েই শিরোনামে থাকব, তা হলে তো শিল্পী হওয়ার কোনও মানেই নেই। ট্যালেন্টটাকে সর্বক্ষণ ঘষামাজা করতে হয়। ‘পেডলার্স’ কান-এ গিয়েছে। ছবিটি নিয়ে চর্চা হয়েছে। এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। তার পর তো এগোতেই হত। আমার ধারণা একজন শিল্পীর বড় গুণ হল নম্রতা। আশি বছর বয়সে এসে আজও গিরীজাদেবীর মতো কিংবদন্তি শিল্পী প্রোগ্রাম করার আগে ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। শিল্পী হিসেবে এটাই শেখার।”
মডেলিং করার পর অন্যান্যরা যেখানে সোজা সিনেমায় অভিনয় করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন, নিমরত সেখানে ছিলেন ব্যতিক্রমী। থিয়েটার করেছেন। বলছেন, “আমি মনে করি যে প্রথম দিকের কিছু প্রজেক্ট অভিনেতাকে বেছে নেয়। অভিনেতা কিন্তু তখন প্রজেক্ট বাছার জায়গায় থাকেন না। আমি কখনও ব্রেক পাওয়ার জন্য বসে থাকিনি। দেখুন ফ্রন্ট পেজ-এ ছবি ছাপানো আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি নিজেই কি ফ্রন্ট পেজ-এ ছাপানো সব ছবির কথা মনে রাখি? রাখি না। বরং মনে থাকে পরদায় দেখা কোনও ভাল অভিনয়।”
ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে মন রেখে চলাটাই দস্তুর, সেখানে নিমরতের সাফ কথা সবার হজম হয়? “নিজের কাছে তো অসৎ থাকতে পারি না। আমি এমন একটা চরিত্র করতে চাই না, যা করে আমি খুশি হব না। আমি অভিনেতাদের চোখে ক্লান্তির ছাপ দেখলে ভয় পাই,” বলছেন তিনি। চটজলদি সাফল্যের দরকার নেই তাঁর। “তার থেকে বেশি জরুরি হল ‘লার্জার পিকচার’টাকে দেখা। অভিনয় করা মানে কি শুধুই যশ আর খ্যাতি? আমি জ্ঞান দিতে চাই না। তবে এটা মনে করি যে অভিনেতার একটা ক্ষমতা থাকে। নিজের আওয়াজে জোর থাকে। সেটার অপব্যবহার না করে এমন কিছু করা উচিত যাতে সত্যিই ভাল হয়।”
‘দ্য লাঞ্চবক্স’ নিয়ে এত চর্চা চারদিকে। ব্যক্তিগত ভাবে সিনেমার গল্পটা নিমরতের দারুণ পছন্দের। “আমি কো-ইনসিডেন্সে বিশ্বাস করি। আমি জানি ক্ষণিকের সাক্ষাতে এমন অনেক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হতে পারে যার রেশ সারা জীবন থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তো অজানা মানুষের সঙ্গে নিজের কত ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করে ফেলি। হয়তো ফ্লাইটে দেখা হল। ওই কয়েক ঘণ্টার বন্ধুত্ব! জানি প্লেন থেকে নামার পর আর হয়তো কোনও দিন যোগাযোগ থাকবে না। তবু মুহূর্তগুলো থেকে যাবে। এমন এক নাম-না-দেওয়া সম্পর্ক নিয়েই তৈরি ‘দ্য লাঞ্চবক্স’। ইরফান আর নওয়াজ এই ছবির অন্যতম সম্পদ। তবে কী জানেন, ইরফানের সঙ্গে আমার একটাও দৃশ্য নেই।”
‘দ্য লাঞ্চবক্স’য়ে নিমরত
যে যাত্রা ক্যাডবেরিতে কামড় দিয়ে শুরু হয়েছিল, নিমরত তা লাঞ্চবক্সের ডাব্বাতেই শেষ করতে চান না। এখন তাঁর মনে অস্কারের খিদে। টেল্যুরাইডের মতো চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি এ ভাবে সমাদৃত হয়েছে ভেবেও তাঁর দারুণ লাগছে। সিনেমাটি একটা মির্যাকল দিয়ে শুরু। তার পর ম্যাজিক রিয়েলিজমের জাদু দর্শককে ছুঁয়ে যায়। তাই হয়তো ভিন্ন ঘরানার পরিচালকদের সিনেমাটা ভাল লেগেছে। বলছেন, “সলমন রুশদির ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’ আর ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ আমার খুব প্রিয়। ওঁর মতো একজনের কাছ থেকে উৎসাহজনক মন্তব্য শুনে দারুণ লাগছে। এই ছবিটি আঁতেল আর বাণিজ্যিক ছবির বিভাজনটা মুছে দিয়েছে।” শুক্রবার ভারতে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। বাণিজ্যিক সাফল্য ছাড়াও আশা রাখছেন এ দেশ থেকে এ বার সঠিক ছবিই মনোনীত হবে অস্কারের জন্য। ভারতীয় একটা গল্প নিয়ে তৈরি ছবিটির নাকি বিশ্বব্যাপী আবেদন রয়েছে। এখন লোভ একটাই অস্কার-দরবারে স্বীকৃতি!
‘দ্য লাঞ্চবক্স’ আমার দারুণ লেগেছে। টেল্যুরাইড চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি বড় হিট। বেস্ট ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন আ লং টাইম। আমার মতে অস্কার দৌড়ে বিদেশি ছবির বিভাগে এই সিনেমাটির জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সলমন রুশদি

নিমরত ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ ছবিটির আত্মা।
বিবাহিত জীবনের নানা উদ্বেগ, শহুরে জীবনের হতাশা আর ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা একজন কিংবদন্তি অভিনেতার মতো ও পরদায় ফুটিয়ে তুলেছে।
কর্ণ জোহর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.