দুর্গাপুজোর চাঁদার জুলুমের জেরে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুরের পাল্টা প্রতিবাদে নেমে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে অভিযুক্ত ক্লাবে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালালেন। বাসিন্দাদের মারে এক ক্লাব সদস্য গুরুতর জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। রবিবার রাতে বালুরঘাট থানার ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খিদিরপুর চরপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, রাজু চন্দ নামে যুবককে রাতেই বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ক্লাবের বিরুদ্ধে এর আগেও জোরজুলুম করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে দ্রুত তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” প্রয়োজনে ওই ক্লাবের এ বারের পুজো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
সোমবার সকালে রাজুকে হাসপাতালে দেখতে যান স্থানীয় তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পপিতা সিংহ। বর্তমানে ক্লাবের অধিকাংশ সদস্য শাসক দলের সমর্থক হওয়ায় জুলুম শুরু করেছ বলে বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন। তবে পঞ্চায়েত সদস্য পপিতাদেবীর বক্তব্য, “অপরাধীদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। আগে মানুষ ভয় পেতেন। এখন পরিবর্তনের সরকারে আমলে মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেয়েছেন বলেই অভিযুক্তরা পিছু হটেছে।” তৃণমূল নেতা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান লগিন দাস ওই দিন বলেছেন, “পুলিশকে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” |
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ওই ক্লাব চাঁদার জুলুমবাজি শুরু করেছে। দাবিমত কোথাও কোথাও ১০-২০ হাজার টাকা চাঁদা না পেলে অভিযুক্তরা বাসিন্দাদের উপর চড়াও হয়। দুই বছর আগে পুলিশের কাছে একই অভিযোগ হয়েছিল। এবারও তাঁর কোনও পরিবর্ত হয়নি। এদিন এলাকায় গেলে বাসিন্দারা ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হন। যদিও ক্লাবের কোমও সদস্য বা পদাধিকারীর এদিন খোঁজ মেলেনি। বালুরঘাটের ডিএসপি উত্তম ঘোষ জানান, দু’তরফে অভিযোগ হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তল্লাশি চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আত্রেয়ী নদীর ধারে খিদিরপুর চরপাড়া এলাকায় এক বয়স্ক দম্পতি বুদ্ধি হালদার ও যমুনা দেবী দুঃস্থ বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিয়ে মাধুকরি করে একটি আখড়া চালান। সেখানে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া ও নামকীর্তন চলে। ওই দিন রাত ১০টা নাগাদ দম্পতির কাছে ওই ক্লাবের তরফে বিল কেটে ৩০ হাজার টাকা দুর্গা পুজোর চাঁদা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। যমুনাদেবী বলেন, “এত টাকা চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানালে ওই ছেলেরা খেপে যায়। মারধর করা ছাড়াও মাটির বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এমনকী ধারালো অস্ত্র দিয়ে টিনের চাল কেটে ফেলা হয়।”
ক্লাবের চাঁদার জুলুমের বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। আখড়ায় হামলার খবরে এলাকার মানুষ একজোট হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাত ১২টা নাগাদ ক্ষিপ্ত জনতা পাকা ক্লাব ঘরের বারান্দার টিনের শেড ভাঙচুর করে। কয়েকজন ক্লাব সদস্য আসলেও বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। ওই সময়ই জখম হন রাজু চন্দ। তাঁর মা রেবা দেবী বলেন, “গন্ডগোলের খবর পেয়ে ছেলে দেখতে গিয়েছিল। ওকে বাঁশ দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।” |