কোথাও চারপাশে ত্রিপল ঢাকা তাঁবুর মতো ঘর। কোথাও দরমার বেড়ার উপরে ত্রিপল ঢাকা খড়ের চাল। এভাবেই ২৫-৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে পরিবারগুলি। না এটা কোনও পঞ্চায়েত এলাকা নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমাশহর ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছবি।
বস্তি উন্নয়নে কয়েক কোটি টাকা পড়ে থাকলেও পুর এলাকার মধ্যেই বস্তিবাসীদের এ হেন অবস্থা নিয়ে পুরভোটে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অবশ্য ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল পুরবোর্ড চুপচাপ বসে নেই। যথারীতি তাঁরা এর দায় ঝেড়ে ফেলে আগের পুরর্বোডে ক্ষমতায় থানা বামেদেরই এ জন্য দায়ী করেছেন।
পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে বস্তি এলাকা রয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে হুগলি নদীবাঁধের পাশে, ২ নম্বরে মঞ্জিতা মোড়ে, ৪ নম্বরে সুভাষপল্লি। নম্বরে রামচন্দ্রপুরের একাংশ, ৮ নম্বরে রানাপাড়া, ১১ নম্বরে রায়নগরের একাংশ, ১২ নম্বরে মাঝিপাড়া ও ইন্দিরা নগর। |
১৩ নম্বরে সৎপল্লি, ১৪ নম্বরে শান্তিপল্লি, ১৫ নম্বরে উকত্তর হাজিপুর ও আজলদার পাড়া, ১৬ নম্বরে সুকান্তপল্লি। এই সব এলাকার বস্তিবাসীদের অভিযোগ, নতুন ঘর পাওয়া তো দূরের কথা, পুরসভার অন্যান্য পরিষেবা যেমন পানীয় জল, নিকাশি, বিদ্যুৎ থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। তাঁদের আরও অভিযোগ, সুষ্ঠু নিকাশি না থাকায় বৃষ্টির জমা জল জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়, মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়। অথচ পুরসভা নির্বিকার।
বস্তি উন্নয়ন নিয়ে ডান-বাম দু’পক্ষের চাপানউতোরের মধ্যেই ঘুরে আসা গেল পুরসভার ১৫ নম্বরে ওয়ার্ডের আজলদার পাড়ায়। গত ১০ বছর ধরে এই ওয়ার্ড নিজেদের দখলে রেখেছে কংগ্রেস। কাজের নিরিখে এ বারও ওই ওয়ার্ড তাদের দখলে থাকবে বলে দাবি কংগ্রেসের। যদিও ওয়ার্ডের বাস্তব চিত্রটা অন্যরকমই। এলাকার আজলদারপাড়ায় ১০০টি পরিবারের বাস। লোকসংখ্যা প্রায় আড়াইশো। এলাকায় বস্তির সংখ্যা ৪০টি। যার মধ্যে ত্রিপলের নীচেই বাস করেন ৩৫টি পরিবার। রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশি কোনও পরিষেবাই পায় না এই সব পরিবার। পাড়ার পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে কপাটহাট খাল। কিন্তু তাও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জল নিকাশির কাজে অক্ষম। তার উপর জমা জলে মসার আঁতুড়ঘর তৈরিতে এলাকায় প্রতিনিয়ত ম্যালেরিয়ার আশঙ্কা নিয়েই বাঁচতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বছরে পর বছর সন্ধ্যে নামলে কুপি বা হ্যারিকেনের আলোই ভরসা। কারণ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি পুরসভা। |
স্থানীয় বাসিন্দা তনুজা বিবি, রহিমা বিবি, জহিরুন বিবি বলেন, “আমাদের স্বামীরা কেউ ভ্যান চালায়, কেউ দিনমজুর। ঘরের জন্য দরবার করতে গিয়ে জেনেছি, সরকারি ঘর পেতে গেলে পুরসভাকে ১৬ হাজার টাকা দিতে হবে। এমনকী ঘরের ভিতও নিজেদের টাকায় দিতে হবে। এ জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ। দিন আনি দিন খাই-এর সংসারে এত টাকা কোথায় পাব? ফলে আমাদের দিকে তাকানোর কেউ নেই।”
পুর এলাকায় বস্তিবাসীদের উন্নয়ন না হওয়া নিয়ে সিপিএমের অভিযোগ, বস্তি উন্নয়ন নিয়ে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ একেবারেই মাথা ঘামায়নি। ডায়মন্ড হারবার সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক সমর নাইয়া বলেন, “বস্তি উন্নয়নের জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। অথচ বস্তিবাসীরা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছেন।” এ ব্যাপারে তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান পান্নলাল হালদারের দাবি, “বস্তি উন্নয়নের টাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে বস্তিবাসীদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০০টি ঘর তৈরি হয়েছে। আরও ২০০টি তৈরির কাজ চলছে।”
পুরপ্রধান এমন দাবি করলেও তেমন ঘর অবশ্য এই প্রতিবেদকের চোখে পড়েনি।
|