রং থেকে শুরু করে মাটি, খড় থেকে বাঁশ সব কিছুরই দাম বেড়েছে। বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। গতবারের থেকে এ বছর মহার্ঘ্য দুর্গা মূর্তি। রায়গঞ্জের কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের দাবি, কিছু পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা সেই হারে প্রতিমার দাম দিতে রাজি নন। তার জেরেই উদ্বেগে রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লি কুমোরটুলি। প্রবীণ মৃৎশিল্পী ভানু পাল বলেন, “গত বছরের তুলনায় মূর্তি উপকরণের দাম, শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুন বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ প্রতিমার বাড়তি দাম দিতে চাইছেন না। তাই বরাত নেওয়া কমিয়ে দিয়েছি।”
কুমোরটুলিতে দেড়শো মৃৎশিল্পী সারা বছর বিভিন্ন প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। শিল্পীদের দাবি, গতবছর এক জন মৃৎশিল্পী গড়ে ২০টি করে প্রতিমা তৈরি করলেও এবারে ক্ষতির আশঙ্কায় কেউ ১০ থেকে ১২টির বেশি প্রতিমা তৈরির বরাত নিচ্ছেন না। পাশাপাশি, প্রতিমা নিয়েও চুক্তি অনুযায়ী দাম না দেওয়ার সমস্যার কথাও জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। ভানুবাবুর কথায়, “গত বছর অন্তত ৩০ জন মৃৎশিল্পী বরাত অনুযায়ী প্রতিমার সঠিক দাম পাননি।” সে কারণে এ বারে লিখিত চুক্তি ছাড়া কোনও পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতিমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমোরটুলি।
কুমোরটুলির শিল্পীরা জানিয়েছেন, গতবছর মাটির দাম ঠেলা প্রতি ২০০ টাকা ছিল, এ বছর বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিনশো টাকা। একজোড়া বাঁশের দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা, খড়ের দামও দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিমার সাজসজ্জা এবং পোশাকের দাম ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৯ হাজার টাকা হয়েছে। রাসায়নিক এবং খড়িমাটি রঙের দামও কেজি প্রতি ৫০০ থেকে হাজার টাকা বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। মৃৎশিল্পী রিপন পাল, সনাতন পাল, ভোলানাথ পাল ও রঞ্জন রায় বলেন, “সব পুজো কমিটিই গত বছরের দাম দিতে চাইছে। আমরা জানিয়েছি, বর্ধিত দাম না পেলে প্রতিমা তৈরি সম্ভব নয়।” রায়গঞ্জের দেহশ্রী ক্লাব দুর্গাপুজো কমিটির কর্ণধার প্রাণেশ সরকারের কথায়, “মূল্যবৃদ্ধি অনুযায়ী পুজো উদ্যোক্তাদের মৃৎশিল্পীর প্রতিমার ঠিক দাম দেওয়া উচিত। প্রতিবছর সর্বজনীন দুর্গা পুজো কমিটিগুলি কমবেশি পুজোর বাজেট বাড়ায়। পাশাপাশি যে পুজো কমিটিগুলির চাঁদা বেশি ওঠে না তাঁদের কথাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।” |