পথ সারাতে টালবাহানায় চিন্তিত পুজো উদ্যোক্তারা
হাতে ২৪ দিন। শিলিগুড়ির বিগ-বাজেটের পুজো উদ্যোক্তাদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। মন্ডপ, প্রতিমা, আলোর প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ হলেও একটা অন্য রকম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উদ্যোক্তাদের অনেকেই। তা হল, শহরের রাস্তার যা বেহাল দশা, তা ঠিক না হলে শহরবাসী পুজো দেখবেন কি করে! যেমন শিলিগুড়ি রথখোলা স্পোর্টিং ক্লাবের কথাই ধরা যাক, অশুভ শক্তির দমনএ ভাবনায় চলছে তার প্রস্তুতি। কী ভাবে মানুষ পুজো দেখতে আসবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সম্পাদক সুভাষ ভাওয়াল। তিনি বলেন, “পুজোর আগে রাস্তা তৈরি বা মেরামতির কোন উদ্যোগ নেয়নি পুরসভা। পুরকর্তাদের যা হালচাল তাতে আদৌ পুরসভা বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না। কোন দুর্ঘটনাও হতে পারে। তাই আমাদের তরফে সবরকম ব্যবস্থা করা হবে।”
দুর্ভোগের রাস্তা... ঘোঘোমালি রোড।
চম্পাসারির জাতীয় শক্তি সঙ্ঘ ও পাঠাগারের পুজো মণ্ডপের সামনের রাস্তা বেহাল। তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ কর্মকার বলেন, “রাস্তা খারাপ রয়েছে, পুজোর সময় যানজট তৈরি হয়। আমাদের তরফে প্রশাসনকে জানান হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছে মেরামতি করে দেওয়া হবে, কিন্তু আর কবে হবে তা বুঝতে পারছি না।” রাস্তা নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন রবীন্দ্র সঙ্ঘের পুজো কর্তারাও। ক্লাব সদস্যরা বলেন, “আমাদের ক্লাবের সামনে রাস্তা কিছুটা ভাল, আশপাশের রাস্তা খুবই খারাপ, দেখি পুরসভা কিছু করে কি না।”
পুজোর মাস খানেক আগে বিভিন্ন রাস্তার ছবিটা এইরকমই। হয়ত সাধারণ মানুষকে পুজো দেখতে হবে এভাবেই। কিন্তু একই শহরে বিপরীত চিত্র মন্ত্রী-মেয়রদের পাড়ার রাস্তায়। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং পুরসভার মেয়র পরিষদ (পূর্ত) সুজয় ঘটকের বাড়ির সামনের রাস্তা নিয়ে অভিযোগ নেই। ঝাঁ চকচকে রাস্তা, কোথাও একই রাস্তায় দু’বার পিচের প্রলেপ পড়েছে বলে অভিযোগ। আর তা নিয়েই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মানুষদের মধ্যে। পুর এলাকায় রাস্তা রয়েছে প্রায় ১৩০০ মিটার। তার মধ্যে পাকা রাস্তা ৮০০ মিটার। সংযোজিত এলাকা সহ শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে রয়েছে কাঁচা রাস্তা। যার দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটারের কাছাকাছি।

নিবেদিতা রোড।

বিধান মার্কেট এলাকা।
পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলরদের অভিযোগ, বরাবরই পক্ষপাতিত্ব করে আসছে শিলিগুড়ি পুরসভার বর্তমান বোর্ড। বিরোধী কাউন্সিলর একাংশের কটাক্ষ, “দুর্ভোগ এড়িয়ে চলাফেরা করতে তবে কী এখন থেকে মন্ত্রী মেয়রের বাড়ির সামনে বাড়ি তৈরি করে থাকতে হবে।” বিরোধী দলনেতা সিপিএম কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান পুরবোর্ড নিজেদের খেয়াল খুশি মতো কাজ করেছেন। আগে তৃণমূল-কংগ্রেস-এর বোর্ড নিজেদের ওয়ার্ডেই শুধু কাজ করেছে। বাকি ওয়ার্ডগুলি সবসময়ই বঞ্চিত থেকেছে। এমনকি পুজোর আগে রাস্তা তৈরি নিয়ে পরিকল্পনা নিতে পারেনি।”
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ মেয়র-মন্ত্রীরা। পুরসভার মেয়র পরিষদ (পূর্ত) সুজয় ঘটক বলেন, “আমি প্রয়োজন অনুযায়ী সব ওয়ার্ডেই কাজ করছি। দায়িত্ব আসার পর সব থেকে বেশি বামেদের ওয়ার্ডেই কাজের টেন্ডার হয়েছে। বামেদের অভিযোগ সঠিক নয়।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “রাস্তা তৈরির কাজ পুরসভার। তবুও পুজোর আগে রাস্তা তৈরির জন্য পুর দফতর থেকে ৭৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।” যদিও মন্ত্রীর বাড়ির সামনের মসৃণ রাস্তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন খোদ পুরসভার মেয়রই। মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “তৃণমূল যখন পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে ছিল তখন নিজেদের ওয়ার্ডের রাস্তা গুলি তৈরি করে নিয়েছে।” তবে তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি মেয়র।
গঙ্গোত্রী দত্তের
বাড়ির সামনের রাস্তা।
মেয়র পারিষদ পূর্ত সুজয় ঘটকের
বাড়ির সামনের রাস্তা।
গৌতম দেবের
বাড়ির সামনের রাস্তা।
শিলিগুড়ি শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বিশেষত সংযোজিত ওয়ার্ডের রাস্তাগুলির দশা এখন সবচেয়ে করুণ বলে অভিযোগ। পুরসভার দাবি, বাজেট পাশ না হওয়ায় রাজ্য সরকারের তরফে যে আর্থিক নির্দেশিকা রয়েছে তার জেরে নতুন কোনও কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মন্ত্রী যে টাকার কথা বলেছেন তা তিনি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন মেয়র। মেয়র পারিষদ পূর্ত সুজয় ঘটক বলেন, “মন্ত্রী যখন বলেছেন তখন আশা করছি টাকা পেয়ে যাব।” তবে নতুন কাজ করতে হলে বাজেট পাস করতে হবে, যে আথির্ক নির্দেশিকা রয়েছে তাতে নতুন কোন কাজ করতে পারবে না পুরসভা। তাই উন্নয়নের লক্ষে ২৩ সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড।
ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.