হলদিয়া নিয়ে শাসক দলকে কড়া প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। খুনখারাবির রাজনীতি বন্ধ না-হলে পুজোর পরে বিশেষ দাওয়াইয়ের কথা বলেছিলেন গৌতম দেব। এ বার পুজোর পরে দুর্বার আন্দোলনের জন্য ছাত্র-যুবদের প্রস্তুত হতে বললেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। সিপিএম নেতাদের পরপর এই বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার, লোকসভা ভোটের আগে একাধারে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এবং সরকারকে চাপে ফেলতে আন্দোলনের ধার বাড়ানোই আপাতত লক্ষ্য বামেদের।
পঞ্চায়েত ভোটের পরে সিপিএম-সহ সব বাম শরিক দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, হাতের কাছে একের পর এক অস্ত্র পেয়েও সরকারকে কোণঠাসা করতে বিরোধীরা কেন ব্যর্থ? ক্ষমতা হারানোর পরে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে সিপিএম নেতৃত্বের বার্তা ছিল, দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী হিসাবে বামেরা কোমর বেঁধে রাস্তায় নামলে মানুষ তা ভাল ভাবে নেবেন না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২৭ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরে এখন আর অত গণ্ডি কেটে প্রতিবাদের দিন ফুরিয়েছে বলেই নিজেদের পর্যালোচনায় মনে করছে বামেরা। সেই জন্যই লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন উদ্যমে ময়দানে নামার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতেই প্রায় এক দশক পরে কাল, মঙ্গলবার বসছে বামফ্রন্টের সবক’টি গণসংগঠনের যৌথ বৈঠক।
বামফ্রন্টের যুব-ছাত্র সমাবেশ থেকে রবিবার বিমানবাবু আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর বার্তাই দিয়েছেন। বলেছেন, “বিশ্বকর্মা পুজো থেকে উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে। তার পরে যৌথ সভা করে ছাত্র-যুবরা কর্মসূচি নির্দিষ্ট করবে। তার পরে দুর্বার আন্দোলন করতে হবে একেবারে নীচের তলা থেকে।” ছাত্র-রাজনীতিতে রাস্তায় নেমে প্রবল আন্দোলনের পথ ধরেই বিমানবাবুদের উত্থান। বামেদের সঙ্কটের সময়ে সেই আন্দোলনের দাওয়াই-ই এখনকার ছাত্র-যুবদের দিচ্ছেন বিমানবাবুরা। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিনের সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ভালই। একের পর মিছিল এসে ধর্মতলা চত্বর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাতে ছুটির দিনে পুজোর বাজারের সাময়িক অসুবিধা হলেও জমায়েতের বহর বাম নেতৃত্বের উৎসাহ বাড়িয়েছে।
ভুয়ো ঘোষণা নয়, সব হাতে প্রকৃত কাজ এই দাবিকে সামনে রেখে এ দিনের সমাবেশ থেকে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর প্রাথমিক সুর অবশ্য বেঁধেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী। প্রশাসনিক আদালতের রায়ের পরেও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্যানেলভুক্তদের নিয়ে আন্দোলন করে যুব লিগ সাম্প্রতিক কালে যে সাফল্য পেয়েছে, তার উল্লেখ করেই অনির্বাণবাবু বলেন, “যে ভাষা সরকার বোঝে, সেই ভাষায় বলতে আমরা প্রস্তুত। আমরা এখনই রক্তাক্ত, আক্রান্ত, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। আমরা আরও রক্ত দিতে চাই, প্রাণ দিতে চাই! বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি চাই।” পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদে জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারের দফতরে অবস্থানের মতো কর্মসূচি কেন নেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। সেই সূত্র ধরেই পরে বিমানবাবু (‘বৃদ্ধ হয়েছি, যুব সমাবেশে কেন হাজির হব’, এই দিয়ে শুরু করেছিলেন) বলেন, “জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের সামনে অবস্থান নিশ্চয়ই হবে, যেটা অনির্বাণ বলছে। তার জন্য আমাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না!”
চাকরি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবিধ ঘোষণা এবং পরিসংখ্যানকে এ দিন তীব্র কটাক্ষ করেন সূর্যবাবু। পাশাপাশিই, শাসক দলের আক্রমণ মোকাবিলা করেই আন্দোলনের পথে এগোনোর জন্য ছাত্র-যুবদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সাতের দশকের দৃষ্টান্ত দিয়ে বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) ইন্দিরা গাঁধী না, সিদ্ধার্থ রায় না! হাতি-ঘোড়া গেল তল, বামন বলে দেখি কত জল! ভয় আমাদের দেখাবেন না!” বিমানবাবু-সূর্যবাবুদের রেশ ধরে এবং সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর কথা এনে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী, এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসেরা দাবি করেন, আক্রমণ যত বাড়বে, তাঁদের জমায়েত ততই বড় হবে! |