শিল্পমন্ত্রী শনিবার বলেছিলেন, পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হয়েছে। তিনি খেয়াল রেখেছেন। শিল্পমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরেও চিন্তামুক্ত হতে পারছে না ডিভিসি। বরং পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে তাঁদের নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজেই যে ভাবে বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে আদৌ অর্থ বিনিয়োগ করবেন কি না, তা নিয়েই ভাবছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। আর সেটা সত্যি হলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হাতছাড়া হবে এ রাজ্যের।
ডিভিসি-র ওই প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র রবিবার বলেন, “অনিশ্চয়তার মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে প্রকল্প করার ঝুঁকি আদৌ নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প রূপায়ণের খরচ দেড় হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”
স্থায়ী চাকরির লিখিত প্রতিশ্রুতির দাবিতে শুক্রবার থেকে প্রকল্পের মূল গেট আটকে বিক্ষোভ অবস্থান করছে স্থানীয় ‘ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশন’। পাশাপাশি স্থায়ী চাকরি ও বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবিতে ওয়াটার করিডরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’। ডিভিসি-র অভিযোগ, রবিবার অন্য একটি গেটও বন্ধ করে দেওয়ায় সু্যুইচ ইয়ার্ডের অপারেশন ও মেনটেন্যান্স বিভাগের কিছু কর্মী আটকে পড়েন প্রকল্পস্থলের ভিতরে। শনিবার রাতের শিফ্টে ঢুকেছিলেন কর্মীরা। রবিবার সকাল ৮টায় বেরনোর সময় গেটে বিক্ষোভকারী জমিহারারা তাঁদের আটকে দেন। সকালের শিফ্টের কর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দেবাশিসবাবু বলেন, “চারশো কেভির ওই স্যুইচ ইয়ার্ডের সঙ্গে ন্যাশানাল পাওয়ার গ্রিডের সংযোগ রয়েছে। কর্মীরা দীর্ঘ সময় আটকে রয়েছেন। এ রকম চললে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংবহলে প্রভাব পড়বে ঝাড়খণ্ড ও এ রাজ্যের কিছু এলাকায়।” কর্মীদের ঢোকা-বেরোনোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশন।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। দেবাশিসবাবুর কথায়, “প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে প্রশাসনের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু, পাচ্ছি না।” রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন শনিবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করেছেন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ডিভিসি কর্তৃপক্ষের ‘অনড়’ মনোভাবের কারণেই আলোচনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “জমিহারারা যে-সব দাবিতে আন্দোলন করছেন, তা মেটানোর দায়িত্ব পুরো ডিভিসি-র।” |