জমিহারাদের সংগঠনের একের পর এক বাধায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ফের থমকে গেল।
শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কর্মীদের ঢুকতে বাধা দিয়ে জমিহারাদের একটি সংগঠন গেট আটকে অবস্থান শুরু করে। ওই দিনই ডিভিসি-র ওই প্রকল্পে জল আনার জন্য ‘ওয়াটার করিডর’ তৈরির কাজও আটকে যায়। শনিবারও ওই সংগঠনটি প্রকল্পের গেটে অবস্থান করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেলপথের কালর্ভাট ও রক্ষীদের আবাসনের কাজেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে ডিভিসি-র ওই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র বলেছেন, “এ ভাবে কাজ চলতে পারে না। সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সক্রিয় সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্প রূপায়ণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।” তবে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনা হয়েছে। তিনি খেয়াল রেখেছেন।” রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “ডিভিসি যাতে প্রকল্প নিয়ে অন্য রকম ভাবনা ভাবতে বাধ্য না হয়, তা অবশ্যই দেখা হবে।” |
রাজনৈতিক ভাবে সমস্যা মোকাবিলায় এ দিনই জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায় বৈঠকে বসেন। কারণ, যে সংগঠনটি অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছে তাতে অন্যদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদেরও দেখা গিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “চাকরির প্রতিশ্রুতি চেয়ে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটাব।” এ দিনই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের চেক না নিয়ে যে তৃণমূল সমর্থকেরা ওয়াটার করিডরের কাজে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের বুঝিয়ে প্রকল্পের পক্ষে নিয়ে আসা হবে। জমিহারাদের প্রকল্পের নানা কাজে যুক্ত করে প্রশাসনও সমাধানের পথ খুঁজছে।
পুরুলিয়ায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দু’টি পর্যায়ে ২,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প গড়ছে ডিভিসি। প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু পাঞ্চেত জলাধার থেকে জলের পাইপ পাতার কাজে বাধা দিচ্ছে ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’। জমিহারাদের একাংশ চেক নিলেও বাকিরা স্থায়ী চাকরি ও জমির বর্তমান মূল্যে ক্ষতিপূরণ চাইছেন ডিভিসি-র থেকে। ওই সংগঠনের নেতা নিখিল মণ্ডল বলেন, “২০০৭-০৮-এর দরের নিরিখে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। আমরা জমির বর্তমান দর চাইছি।”
বৃহস্পতিবার পুলিশ মোতায়েন করে নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ, গুনিয়াড়া, বাথানবাড়ি এলাকায় প্রকল্পের পাইপ লাইনের জন্য মাটি কাটা শুরু হয়। সে দিন ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র সদস্যেরা অল্প বাধা দিলেও কাজ নির্বিঘ্নেই হয়। কিন্তু শুক্রবার প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় পুলিশ মোতায়েন হয়নি। বন্ধ হয়ে যায় কাজ।
পক্ষান্তরে ‘ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশন’ শুক্রবার থেকে প্রকল্পের গেটে অবস্থান শুরু করে। তাদের তরফে চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “প্রথম পর্যায়ে কাজে যুক্ত জমিহারাদের ছাঁটাই করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা। ছাঁটাই কর্মীদের অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স বিভাগে নিয়োগের ব্যাপারে ডিভিসি-র কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাইছি।” এ দিন সংগঠনটিই প্রকল্পের আরও কয়েকটি কাজে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার বলেন, “উৎপাদন শুরু হলে ওই কাজে জমিহারারাই অগ্রাধিকার পাবেন। তবে যত দিন জলের সমস্যা না মিটবে, তত দিন উৎপাদন শুরু অনিশ্চিতই থাকবে।” |