রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প
পুলিশ আসেনি, বন্ধ ডিভিসি-র কাজ
মিরক্ষা কমিটির সামান্য প্রতিরোধেই ফের পিছিয়ে গেল প্রশাসন। থমকে গেল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজ। বৃহস্পতিবার পুলিশি পাহারায় নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ, গুনিয়াড়া ও বাথানবাড়ি এলাকায় কাজ শুরু হয়েছিল। সামান্য বিরোধিতা এলেও প্রথম দিন নির্বিঘ্নেই কাজ হয়। কিন্তু শুক্রবার পুলিশ মোতায়েন না করায় নির্মাণের কাজ ফের বন্ধ করতে বাধ্য হল ডিভিসি। ডিভিসি-র এই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র বলেন, “প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া ওয়াটার করিডরের কাজ করা সম্ভব নয়। শুক্রবার পুলিশ না পাওয়ায় কাজ হয়নি। এতে ওয়াটার করিডরের কাজে জটিলতা বাড়ল।”
ওয়াটার করিডরের এই অচলাবস্থার মধ্যেই এ দিন জমিদাতাদের একাংশ নির্মীয়মান তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের সদর দরজা আটকে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। ‘অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স’ বিভাগে জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে ডিভিসি-র কাছে তাঁরা লিখিত প্রতিশ্রুতির দাবি তোলেন। বিক্ষোভের জেরে এ দিন প্রকল্প এলাকার ভিতরে ঢুকতে পারেননি মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র-সহ অন্য আধিকারিকরা। প্রকল্পের নির্মাণকাজও পুরোপুরি বন্ধ থাকে। সূত্রের খবর, ডিভিসি-র কর্তারাও মহাকরণকেও পুরো বিষয়টি অবগত করেছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কাজ চালুর ব্যাপারে আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কলকাতা থেকে জেলায় ফিরে পুলিশ, প্রশাসন ও ডিভিসি-র সঙ্গে কথা বলব। জমিদাতাদের সঙ্গেও কথা হবে।”
প্রকল্পের দরজা আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন জমি মালিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
রঘুনাথপুরে মেগা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ওয়াটার করিডর (জলের পাইপ লাইন পাতার কাজ) নির্মাণে জমি পেয়েও জমি মালিকদের একাংশের বিরোধিতায় কাজ করতে পারছিল না ডিভিসি। জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রী-বিধায়কের সঙ্গে ডিভিসি-র বৈঠকে স্থির হয়, প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন করে কাজ শুরু করা হবে। বৃহস্পতিবার কাজ শুরু হয় নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ, গুনিয়াড়া ও বাথানবাড়ি এলাকায়। কিন্তু গুনিয়াড়া ও পরে রায়বাঁধ এলাকায় জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির কিছু সদস্য কাজে বাধা দেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে কাজ ফের শুরু হলেও পরে আবার বাধা আসে। তবে সংগঠিত ভাবে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু ওই প্রতিরোধের পরে পুলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে প্রশাসন। কেন এই সিদ্ধান্ত? প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পুলিশ যখন বাধার সামনে পড়ে, তখন কী ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে সে ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া শুক্রবার আন্দোলনকারীরা দলেবলে আরও ভারি হয়ে এলে তাঁদের বাধাও জোরালো হত। সে ক্ষেত্রেই বা পুলিশের ভূমিকা কী হত, তা পুলিশ কর্তাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। তাই এ দিন তাঁরা পুলিশ পাঠাননি।
পুলিশ এল না কেন? জবাবে পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “প্রশাসনের প্রস্তাব ক্রমে আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঠানো হয়। প্রশাসন নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলেই পুলিশ দেওয়া হবে।” এ দিন কী পুলিশ চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়নি? জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর বক্তব্য “এখনই সব বলা সম্ভব নয়। আমরা ভেবে দেখছি কী ভাবে কাজটা করা যায়।” প্রকল্পের জটিলতা কাটানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে ডিভিসি-র কর্তারা। প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার বৃহস্পতিবার রাতেই ফোনে কথা বলেন মন্ত্রী শান্তিরামবাবু, পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। এ দিন তিনি বলেন,“প্রশাসনের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।”.
এই অবস্থায় চাকরির লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়ে জমিদাতাদের একাংশ আন্দোলনে নামায় পরিস্থিতি ডিভিসি-র কাছে বিষ ফোঁড়া হয়ে উঠেছে। ল্যান্ড লুজার অ্যাসোসিয়েশন নামের জমিদাতাদের ওই সংগঠনের নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের মুখে। বরাতপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থাগুলি কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। জমিহারারা তাই কাজ হারাচ্ছেন। তাই আমরা ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি উৎপাদন শুরু হওয়ার পরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপারেশন ও মেনটেন্যান্স এর কাজে জমিহারাদের কাজ দিতে হবে। লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েছি।” প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার বলেন, “উৎপাদন শুরু হলেই নিয়োগ করা হবে। আমাদের নীতি অনুযায়ী জমিহারাই ওই কাজে অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু জলের সমস্যা না মিটলে উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.