মায়ের জন্য জল নিয়ে বেরিয়েছিল স্কুলছাত্রীটি। তার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না তার। রবিবার সকালে বাড়ির কাছেই একটি জলা থেকে তার অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মহেশপুর-মজিরখাঁ এলাকা। অভিযোগ উঠল, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে।
দিল্লিতে তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দোষীদের চরম শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কামদুনির ঘটনায় এখনও সুবিচারের আশায় গণধর্ষিতা নিহত তরুণীর পরিবার। জাঙ্গিপাড়ার এই বছর ষোলোর কিশোরীকেও ধর্ষণের পরে নৃংশস ভাবে খুন করা হয়েছে— প্রাথমিক তদন্তের পরে জেলার পুলিশকর্তাদের একাংশ তেমনই মনে করছেন। |
দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: দীপঙ্কর দে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পরিবারের মেয়েটি পড়ত হরিপালের একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে। বাবা-মা খেতমজুরি করে সংসার চালান। দিদির বিয়ে হয়েছে। দাদা দিল্লিতে গয়নার কাজ করেন। শুক্রবার সকালে মেয়েটির মা বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ডাকাতিয়া খালের ধারে খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বেলা ১১টা নাগাদ মায়ের জন্য জল-মিষ্টি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয় ওই কিশোরী। কিন্তু সেখানে পৌঁছয়নি। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। রবিবার সকালে মেয়েটির বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এক গ্রামবাসী দেখেন, জলার মধ্যে থেকে একটি মেয়ের হাত ও মাথার কিছু অংশ বেরিয়ে আছে।
খবর পেয়ে জাঙ্গিপাড়া থানার পুলিশ আসে। গ্রামবাসীদের বাধায় তারা প্রথমে দেহ উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ কুকুরের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে জনতা। তাঁদের সামনের সারিতে ছিলেন গ্রামের মহিলারা। আলতা দিয়ে অপটু হাতে পোস্টার লেখা হয়, ‘খুনিদের শাস্তি চাই’, ‘বিচার চাই’। পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভও দেখায় জনতা। পরে সিআই দাউদ মনসুর মহম্মদ এবং এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে দেহ উদ্ধার করেন। ময়না-তদন্তের জন্য তা কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, স্থানীয় পার্বতীপুর গ্রামের এক যুবক মেয়েটিকে ফোনে উত্ত্যক্ত করত। কিশোরীর মা বলেন, “পুলিশকে সব বলেছি। পুলিশ বলেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটনার কিনারা করবে।” তবে, এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীর মুখ থেকে মাথার অর্ধেক অংশের চামড়া গুটিয়ে হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। দেহ ফুলে গিয়ে পচন ধরেছিল। গলায় কালসিটে দাগ। নিম্নাঙ্গে পোশাক ছিল না। দেহের পাশ থেকেই উদ্ধার হয় তার সালোয়ার, অন্তর্বাস। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মেয়েটির বাবা। খুনের আগে বা পরে মেয়েটির মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ফলেই চামড়া গুটিয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। তবে, শিয়াল-কুকুর দেহ নিয়ে টানাটানি করলেও এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। ময়না-তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে পুলিশ। |