সন্দেহ গোয়েন্দাদের
নাগাল্যান্ডের জঙ্গি গোষ্ঠী সাহায্য করছে মাওবাদীদের
বিহার ও ওড়িশার মাওবাদীদের কাছে স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি, ম্যাগাজিন পৌঁছতে নাগাল্যান্ডের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী শিলিগুড়ি করিডরকে ব্যবহার করছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন। দু’দিন আগে মালদহ স্টেশন থেকে এ কে ৪৭ রাইফেলের ম্যাগাজিন, স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের ৬১০ রাউন্ড গুলি-সহ ধৃত সত্যনারায়ণ সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে জেরার পরে পুলিশের ওই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, নাগাল্যান্ডের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য বিকাটো সেমা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকেই ওই অস্ত্র, গুলি কেনা হয়। পুলিশের আশঙ্কা, চোরাপথে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, গুলি উত্তর-পূর্ব ভারতে আনা হয়। সেই গুলি সড়ক ও রেলপথে বিহার ও ওড়িশার মাওবাদীদের কাছে পৌঁছতে শিলিগুড়ি-করিডরকে কাজে লাগানোর ছক কষেছে দেশের দুই প্রান্তে সক্রিয় জঙ্গিরা। সে জন্য শিলিগুড়ি করিডরের রেল ও সড়ক পথে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সত্যনারায়ণকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়েছে আদালত। শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, “সত্যনারায়ণ সিংহকে জেরায় অনেক তথ্যই মিলেছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বিহারের ভাগলপুরের রাঙ্গরাচক থানা এলাকার ভীমদাসটোলার বাসিন্দা সত্যনারায়ণের কাছ থেকে যে সব গুলি, ম্যাগাজিন পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন গোয়েন্দারা। সত্যনারায়ণের কাছ থেকে ৭.৬২ এমএম-এর তাজা গুলি মিলেছে ৬১০ রাউন্ড। যা স্বয়ংক্রিয় রাইফেলে ব্যবহৃত হয়। মূলত সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশ ওই গুলি ব্যবহার করে থাকে। সরকারি হেফাজত থেকে চুরি কিংবা লুঠ না করলে তা চোরাকারবারীদের হাতে যেতে পারে না। না হলে চোরাপথে মায়ানমার থেকে আনাতে হবে। তাই নাগাল্যান্ড থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ভাগলপুর-ওড়িশার ‘নেটওয়ার্ক’-এ কে বা কারা যুক্ত, তা খুঁজে বার করতে আসরে নেমে পড়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
এই ঘটনার কথা পৌঁছেছে মহাকরণেও। রেল পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও ধৃতকে জেরা করতে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর, সিআইডি-র অফিসারেরাও শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন। সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দু’টি দলও ধৃতকে জেরা শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্বের জেরায় তদন্তকারী অফিসারদের অনেকেই নিশ্চিত, প্রায় ৬ বছর ধরে নাগাল্যান্ডের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছ থেকে অস্ত্র-সরঞ্জাম কিনে তা ভাগলপুরে পৌঁছনোর কাজ করছেন সত্যনারায়ণ। পরে সেখান থেকে বিহার ও ওড়িশার মাওবাদীদের হাতে পৌঁছচ্ছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুমান। বিহার, ওড়িশা ও অসমের গোয়েন্দাদের তরফেও সত্যনারায়ণের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে সরাইঘাটে মালদহ স্টেশনে পৌঁছে সত্যনারায়ণ দ্বিতীয় শ্রেণির ওয়েটিং রুমে আর পাঁচ জন যাত্রীর সঙ্গে মিশে বসেছিলেন। রেল পুলিশের অফিসারেরা সন্দেহবশত তাঁর ব্যাগ দেখতে চাইলে তিনিরাজি হননি। সেই সময়ে পুলিশের প্রশিক্ষিত কুকুর আনা হলে ব্যাগের সামনে গিয়ে সে চিৎকার করতে থাকে। এর পরে ব্যাগ খুলে ওই গুলি পাওয়া যায়। মিলেছে, .৩০৩ বোরের ১০ রাউন্ড ও ৯ মিমি পিস্তলের ১৫ রাউন্ড গুলি, প্রচুর জাল ভারতীয় নোট, তিনটি মোবাইল, একাধিক এটিএম কার্ড, টেলিফোন ডায়েরি ও একটি এ কে ৪৭ রাইফেলের ম্যাগাজিন।
তদন্তকারী দলের এক অফিসার জানান, অনেক সময়ে মাওবাদীরা এ কে ৪৭ রাইফেল লুঠ করলেও ম্যাগাজিন নিয়ে পালাতে পারেনি বলে দেখা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে চোরাবাজার থেকে ম্যাগাজিন কেনে মাওবাদীরা। সাধারণত, চোর-ডাকাতরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল সে ভাবে ব্যবহার করে না। সে জন্যই ওই গুলি-সরঞ্জাম বিহার ও লাগোয়া ওড়িশার মাওবাদীদের হাতে পৌঁছনোর ছক কষা হয়েছিল বলে সন্দেহ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে গোয়েন্দাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.