|
|
|
|
রাষ্ট্রনেতার ধাঁচেই পাকিস্তানকে বার্তা |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • রেওয়ারি (হরিয়ানা) |
নেপথ্যে সিংহের গর্জন। উপচে পড়া ভিড়। দেহাতি কায়দায় মেক্সিকান ওয়েভ।
‘মোদী-মোদী-মোদী’। দু’দিন আগেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়েছেন। তার পরেই প্রথম জনসভা কুরুক্ষেত্রের বীরভূমিতে। দিল্লি থেকে মাত্র একশো কিলোমিটার দূরে। শাঁখ, নাকাড়া, ভেঁপু আর সিংহের গর্জনে মঞ্চে এলেন নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে তখন প্রাক্তন সেনানীরা। অণ্ণা হজারের সঙ্গী প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ, অলিম্পিকের রুপোজয়ী কর্নেল রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে মোদীর নির্দেশেই ভোটযুদ্ধে ঝাঁপাবে লক্ষাধিক সেনা।
এক ঘণ্টারও বেশি বক্তৃতায় মোদী দিল্লিতে শক্তিশালী সরকার, শক্তিশালী নেতা, শক্তিশালী দেশ বানানোর ডাক তো দিলেনই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হওয়ার পর প্রথম জনসভায় অনেক বেশি করে নিজেকে মেলে ধরলেন রাষ্ট্রনায়কের ধাঁচে। যেখানে তাঁর আদর্শ অটলবিহারী বাজপেয়ী। |
|
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার পর প্রথম জনসভা। রবিবার রেওয়ারিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি। |
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমর্থকেরা এসেছিলেন গগনচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে। সভার আগে রীতিমতো তেতে থাকা তাঁদের কেউ বললেন, “দিল্লির ‘বোবা’ প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে মোদীই হাল ধরুন।” কারও বক্তব্য, “মোদী এলেই ঠান্ডা হবে পাকিস্তান আর চিন। মোদী এলে আর পাকিস্তান আমাদের সেনাদের মুণ্ডু কেটে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না।”
বক্তৃতায় মোদীও সেনাদের মনোবল বাড়ানোর কথা বললেন। সেনাদের কমজোর করার পিছনে দিল্লির সরকারের দুর্বল নীতির প্রসঙ্গ টেনে এনে মনমোহন সিংহকে বিঁধলেন। কিন্তু বিজেপির অধিকাংশ বড় থেকে মাঝারি নেতার মতো পাকিস্তান নিয়ে রে-রে করে উঠলেন না। তাঁর আক্রমণ বলতে এইটুকুই, “পাকিস্তানে নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর আশা ছিল, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর হবে। কিন্তু যে ভাবে আমাদের সেনাদের মারা হয়েছে, তাদের অভিসন্ধি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
আর কী বললেন মোদী? বললেন, “গত ষাট বছরে যুদ্ধ ও বন্দুক প্রতিবেশী দেশগুলির কোনও মঙ্গল করেনি। সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ কারও ভাল করেনি। না পাকিস্তানের, না বাংলাদেশের। লড়াই যদি লড়তে হয়, তা হলে পাকিস্তানের লড়া উচিত দারিদ্র ও অশিক্ষা দূরীকরণের বিরুদ্ধে। যদি আগামী দশ বছর তারা নিজেদের জমিতে সন্ত্রাস বন্ধ করে দেয়, তা হলে আরও উন্নতি করবে।”
বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, হরিয়ানা থেকে অনেকেই এখন সেনা বা আধাসেনায় ভর্তি হন। তাঁদের পরিবার তথা জনতা চাইছিল, মোদী পাকিস্তান নিয়ে অন্তত আরও কঠোর অবস্থান নিন। কিন্তু মোদী সদ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়েছেন। ফলে তাঁর কাঁধে এখন অনেক বেশি দায়িত্ব। তাই তিনি আজকের মঞ্চটিকে বেছে নিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে বার্তা দিতে। প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর বিদেশনীতি কী হবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। তিনি যে বাজপেয়ীর মতো উদার পথ ধরেই চলতে চান, সেটিও বুঝিয়ে দিলেন পরতে-পরতে। যে কারণে বারবার তিনি বাজপেয়ীর কূটনীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি ক্ষমতায় এলেই যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিবেশ তৈরি হবে, এই ধারণা প্রথম সভাতেই ভাঙতে চেয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেন। তা-ও এমন সময়ে, যখন মনমোহন সিংহ আমেরিকায় পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, আজ তাঁর প্রথম সভায় মোদী আগের মতো গুজরাতের উন্নয়নের ঢাক পেটাননি। আরএসএসের কথা শুনে খুব বেশি হিন্দুত্বের কথাও বলেননি কিংবা সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করেননি। এই হরিয়ানায় সনিয়ার জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকলেও সেই প্রসঙ্গে একটি শব্দও খরচ করেননি মোদী। বরং মনমোহন সরকারকে আক্রমণ করেছেন সেনা-প্রসঙ্গে। কংগ্রেস সরকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে সেনাদের মধ্যেও ধর্মের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগও ফের ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন তিনি। মোদী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “আজকের সভা যে হেতু প্রাক্তন সেনানীদের নিয়েই ছিল, তাই মোদী এই পরিধির মধ্যেই বেশি ঘোরাফেরা করেছেন।” মোদীও আজ বলেছেন, “এত বড় দায়িত্ব আমায় দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে পারিনি। আজ এত লোকের মাঝে এসে উপলব্ধি করতে পারছি।”
|
পুরনো খবর: মোদী ও আডবাণীর যুগলবন্দি চায় সঙ্ঘ |
|
|
|
|
|