ভাদ্র যাই যাই করছে। ভ্যাপসা গরম আর অঝোর বৃষ্টির মাঝেও ইতিউতি শরতের দেখা মিলছে। ক্যালেন্ডার জানান দিচ্ছে, পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। স্বভাবতই নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই উদ্যোক্তাদের। শহর জুড়ে চলছে তাঁদের বিচিত্র আয়োজন।
অস্ত্র এখন সুলভ। চলছে এর যথেচ্ছ ব্যবহার। রাজা বসন্ত রায় রোডের সুহৃদ সঙ্ঘ মনে করে, শুধু অপরাধ দমনেই অস্ত্রের দরকার। তা হলে অতিরিক্ত অস্ত্র কী হবে? অস্ত্র দিয়ে নানা শিল্পকর্ম তৈরি করে এঁরা বার করেছেন মুশকিল আসানের পথ। ব্যবহার হচ্ছে দেবীর দশ অস্ত্রও। দেবীর অস্ত্রপ্রাপ্তি থেকে অসুর নিধন মণ্ডপে এই কাহিনিকে দেখানো হবে ছ’টি অংশে। ত্রিশূল আকৃতির চালির মধ্যে সনাতন প্রতিমা। বাড়তি আকর্ষণ থিম সঙ্গীত।
সাধারণ মানুষের চারপাশে আজ আকাঙ্ক্ষা মেটানোর অপরিমেয় পসরা। সেই আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে মানুষ ইঁদুর দৌড়ে ছুটে চলেছে। কোথাও পড়ার চাপ, কোথাও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। দুর্লভ হয়ে উঠছে শান্তি। এই ভাবনাকেই রূপ দিতে চলেছে গড়িয়ার আমরা ক’জন ক্লাব। মণ্ডপ পৃথিবীর আকৃতির। তার উপরে একটি মানুষ এক বিশাল পাথরের চাপ সহ্য করছে। প্রতিমার সনাতন রূপ।
মরুজীবনে উট খুবই দরকারি। কিন্তু উটের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এ বার তাই উট সংরক্ষণের ভাবনা বেহালা বুড়োশিবতলা সর্বজনীনের পুজোয়। তৈরি হচ্ছে উটের আকারে ১০৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ। ঢুকে মনে হবে রাজস্থানের কোনও দুর্গ। দেওয়াল জুড়ে রাজস্থানি শিল্পকলা। দেখা যাবে, ব্রহ্মা জল থেকে উঠছেন। তাঁর মুকুটে সপরিবারে বিরাজমান দেবী।
নাকতলা পল্লিমঙ্গল সমিতির এ বারের ভাবনা ‘হৃদয় আমার নাচে রে’। ময়ূরের আকারের মণ্ডপ। ভিতরে ছাদে অসংখ্য সাদা পায়রা। জলে ভাসছে পদ্ম। দেওয়াল সাজছে পেখম আর সুন্দরবনের নানা গাছের বাহারি পাতায়। এক চালার প্রতিমার অঙ্গসজ্জাতেও পাতার ব্যবহার।
নারকেলডাঙা মেন রোডের পূর্ব কলিকাতা সর্বজনীনের এ বারের বিষয় ‘হৃদয় দিয়ে দেখা’। জাঁকজমক নয়, উদ্দেশ্য শান্তির সন্ধান। পদ্মের আকারে মণ্ডপ। মাঝে রয়েছেন দেবী। তাঁর মূর্তিতে বৌদ্ধ প্রভাব। এ পুজোরও থিম সঙ্গীত রয়েছে। উল্টোডাঙা পল্লিশ্রীর এ বারের ভাবনা ‘সাধনার মাঝে ভগবান দর্শন’। মণ্ডপে থাকবে ভারতের ৮৬ জন সাধকের ধ্যানরত আবক্ষ মূর্তি। দেবীও পদ্মের উপরে ধ্যানরতা। এমনকী, অসুরও ধ্যান করছেন। থাকছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাও।
‘উপলব্ধি’। দমদম পার্ক সর্বজনীনের কাজ চলছে এ ভাবনার উপরে। প্রবেশপথের দু’ধারের দেওয়ালে ম্যুরালে ফুটে উঠবে নির্যাতন, অবক্ষয়ের সঙ্গে সংগ্রামের কথাও। ৪২ ফুট উঁচু ফ্রেমের মধ্যে দাবার রাজার মতো মণ্ডপ। রাজা এখানে রানি রূপে। ভিতরে সাতটি ফ্রেমে শিশুশ্রম, কন্যাভ্রূণ হত্যা, নারী নির্যাতনের মতো সাতটি বিষয় দেখানো হবে মাটির মূর্তি, আলোর কাজে। ফ্রেমের মধ্যে প্রতিমা দেখে মনে হবে দেবী যেন শৃঙ্খল ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন।
প্রফুল্লকানন বালকবৃন্দের এ বারের ভাবনা ‘আমিই সেই মেয়ে’। পুকুরের মাঝে মন্দিরের মতো মণ্ডপ। ভিতরে বাঁশ ও বেতের মডেলে নারী নির্যাতনের নানা রূপ।
শূন্য থেকে শুরু, শূন্যেই শেষ। জীবন ও ব্রহ্মাণ্ডের এই পরিণতি দেখা যাবে কানাই ধর লেন অধিবাসীবৃন্দের পুজোয়। প্রবেশপথে প্রথম সূর্যের গেট। এর পরে বৃত্তাকার গেটে জন্ম থেকে মৃত্যু মানব জীবনচক্র। পরের গুহার মতো গেটে নানা রিপুর প্রতীক। তার পরে ভালবাসার গেট পেরিয়ে মণ্ডপে ঢুকলে দেখা যাবে, কৈলাস থেকে দুর্গাকে রথে চড়িয়ে নিয়ে আসছেন কার্তিক। মায়ের পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী। কোলে গণেশ। নীচে অসুর পদ্ম হাতে দেবী বন্দনায় রত।
হিংসা বিধ্বস্ত সময়ে শান্তির বাণী শোনাতে গৌতম বুদ্ধকে বেছে নিয়েছে আলমবাজারের কলাকার পাড়া পূজা সম্মিলনী। বুদ্ধের আদলে মণ্ডপ। দেওয়ালে থাকছে কাঁথা স্টিচ ও ত্রিপুরার বেতের কাজে বুদ্ধের জীবনের নানা ঘটনা। প্রতিমার রূপেও থাকছে বৌদ্ধ প্রভাব। |