জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ মিটতেই পুজোর মুখে রসিকবিলের বেহাল পর্যটক আবাস সংস্কারের পাশাপাশি একগুচ্ছ প্রকল্পের হতশ্রী দশা ঘোচানোর পরিকল্পনা নিল তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতি। পরিকল্পনা অনুসারে, রসিকবিলের পর্যটক আবাসের মেরামত ছাড়াও নতুন করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর চালু, শিশু উদ্যান, জলাভূমি পরিচিত কেন্দ্র, মিউজিয়াম ও অ্যাকোয়ারিয়াম ভবন সংস্কার করা হবে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। মহালয়ার আগেই কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।
পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের স্বপন সাহা বলেন, “রসিক বিলের ওই সব জমি ও সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বাম নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদের সঙ্গে বিতর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। জেলা পরিষদে নয়া বোর্ড আসার পর তা মিটে গিয়েছে। সংস্কার-সহ নানা কাজ করে গোটা রসিকবিলকে আমরা আকর্ষণীয় করতে চাইছি।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া একসময় নিজেও ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। সভাধিপতি বলেন, “ওই সমস্ত জমির মালিকানা পঞ্চায়েত সমিতির। এ নিয়ে আর কোন বিতর্কের অবকাশ আমরা রাখছি না। পঞ্চায়েত সমিতিই যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। সহযোগিতা করব।” |
অবহেলা-উদাসীনতায় আগাছায় ঢেকেছে শিশু উদ্যান। |
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর রসিকবিলের পর্যটক আবাস-সহ সমস্ত পরিকাঠামোর মালিকানা নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে সিপিএমের দখলে থাকা জেলা পরিষদের বিরোধ শুরু হয়। পর্যটক আবাস সংস্কার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শিশু উদ্যান, অ্যাকোয়ারিয়াম, মিউজিয়াম ভবনের বেহাল অবস্থা দেখা দেয় বলে অভিযোগ। সমস্যার জেরে ‘ফি’ আদায় করা বন্ধ হয়ে যায়। এই বার পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ একই দলের হওয়ায় জটিলতা কাটে। যদিও জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের দিলীপ বিশ্বাস অবশ্য এই প্রসঙ্গে বলেন, কখনওই বিতর্ক ছিল না। আগের পঞ্চায়েত সমিতি ওই সব পরিকাঠামো জেলা পরিষদকে হস্তান্তর করে দিয়েছিল। তার পরেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেখানে ফি আদায় পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। প্রয়োজনীয় কাজের পরিকল্পনাও নেওয়া যায়নি।” |
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক মহলের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর থেকে পর্যটক আবাসের তিনটি ঘরের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিকল হয়ে রয়েছে। নেই পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা। রঙ ও মেরামত না হওয়ায় বিবর্ণ হয়ে পড়ে গোটা আবাসটি। এমনকী ঝোপ জঙ্গলে ছেয়ে যায় চত্বর। দোলনা, স্লিপার-সহ বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম দেখভালের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তালা পড়ে যায় উদ্যানের অ্যাকোয়ারিয়াম ভবনে। আর মিউজিয়ামটি উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপনবাবু জানান, মৎস্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে অ্যাকোরিয়াম ভবন চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। মিউজিয়াম চালুর জন্য এলাকার বাসিন্দাদের কাছে থাকা রাজ আমলের বিভিন্ন প্রাচীন নির্দশন সংগ্রহ করার জন্য প্রচারাভিযান চালানো হবে। স্থানীয় বিডিও সির্দ্ধাথ সুব্বা বলেন, “বন ও পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। গোটা এলাকাকে নতুন করা সাজা হবে।” |
ছবি দু’টি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব। |