কয়েক বস্তা আলু রাখলেও নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেয়নি সাঁইথিয়ার একটি হিমঘর। ময়ূরেশ্বরের রাতগড়া গ্রামের সন্দীপ রায় যখন সেই আলু ফেরত পেলেন, তখন সব ক’টাই পচে গিয়েছে। এরপরেই তিনি দ্বারস্থ হন জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের। বিচারের পর হিমঘর কর্তৃপক্ষকে আলুর দাম এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়াও সন্দীপবাবুকে মামলা চালানোর খরচ দেওয়ারও নির্দেশ দেয় ওই আদালত। আবার অন্য একটি মামলায় খোদ ডাক বিভাগকেই এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে ওই আদালত। এ ক্ষেত্রে স্পিড পোস্ট মারফত চাকরিপ্রার্থীর কাছে ‘ইন্টারভিউ লেটার’ পৌঁছেছিল পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার এক মাস পরে!
চটজলদি বিচার করে জেলার অসংখ্য প্রতারিতদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিচ্ছে সিউড়ির চাঁদনি পাড়ায় অবস্থিত বীরভূম জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ওই আদালতের গত জুলাই মাসেরই হিসেব বলছে, দায়ের হওয়া ২৮টির মধ্যে ১১টি মামলার বিচার হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে সেখানে ৬১৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে এ বছর জুলাই পর্যন্ত দায়ের হওয়া মোট ২,৩২৩টি মামলার মধ্যে ২,২১৩টি মামলারই নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারক সংস্থাকে প্রতারিতকে মূল প্রাপ্য টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। সঙ্গে ক্ষতিপূরণ এবং মামলার খরচও।
শুধু সন্দীপবাবুরাই নন, এমন উদাহরণ আরও আছে। ওই আদালত থেকে ইতিমধ্যেই জেলার বহু প্রতারিত মানুষ ন্যায্য বিচার পেয়েছেন। দু’ বছর আগের দু’টি মামলার কথা জানা গিয়েছে। বোলপুরের মকরমপুরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রমেশ মুখোপাধ্যায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মোটা অঙ্কের টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি না নিলেও তাঁর নামে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটি চেকবই ইস্যু করে বলে অভিযোগ। এবং জারি হওয়া সেই চেকে রমেশবাবুর সই জাল করে অধিকাংশ টাকাই কেউ তুলে নেয়। ওই ঘটনায় ২০১১ সালেই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে রমেশবাবু জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। বিচারের পরে তিনি সুদ-সহ সমস্ত টাকা এবং মামলার খরচ পান। ওই বছরই সাঁইথিয়ার হাসু দাস একটি বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রাপ্য টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করার অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পরে ভুল তথ্য থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর জমা করা টাকা ফেরত দিতে রাজি হচ্ছিল না বিমা সংস্থাটি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালত হাসুদেবীর পক্ষে রায় দিয়ে ২২ হাজার টাকা জরিমানা-সহ প্রাপ্য সমস্ত টাকাই বিমা সংস্থাকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
বীরভূম জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রধান বিচারপতি জিএম মির্ধা বলছেন, “ক্রেতা সুরক্ষা আদালত বিষয়ে বহু মানুষই, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনও ততটা সচেতন নন। ফলে বহু ক্ষেত্রেই প্রতারিত হওয়ার পরেও কেউ প্রতিকারের জন্য বিশেষ এগোন না। কিন্তু আমরা তাঁদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাই যদি আপনার কখনও কোনও ক্ষেত্রে মনে হয় প্রতারিত হয়েছেন, তাহলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সাহায্য নিন।” |