দিন দশেক আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী গ্রামের কাদের শেখ (৪৫)। রবিবার দুপুরে ছেলেমেয়ের স্কুলে ভোট দিতে গিয়ে স্ত্রীর চোখের সামনে খুন হয়ে গেলেন তিনি। খুব কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা তাঁকে চারটি গুলি করে। মারে মাথা ফেটেছে নিহতের স্ত্রী সাবি বিবিরও।
সাবি বিবির অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা এলাকার এক বড় তৃণমূল নেতার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। তাঁদের দেখেই তারা এগিয়ে আসে। সে সময়ে কাছেই ছিল পুলিশ। কিন্তু তিনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তাঁর কথায়, “খুনিদের সবাইকে আমি চিনি। ওরা আমাকেও গুলি করতে এসেছিল। সে সময়ে এক জন বলে ‘বউদিকে মারিস না।’ এর পরে বন্দুক দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে ওরা পালিয়ে যায়।” পাঁচ জনের নামে তিনি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। |
পূর্বস্থলী থানা সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ঘটনার সময়ে কোনও পুলিশকর্মী কাছাকাছি ছিলেন না। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কোনও পুরনো শত্রুতার জেরে এই খুন কি না, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।” পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে একাধিক খুনের মামলা ছিল। পুরনো শক্রতার জেরেই কেউ ওকে খুন করে থাকতে পারে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পূর্বস্থলীর কাষ্ঠশালী নিভাননী হাইস্কুলে পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ সস্ত্রীক ভোট দিতে এসেছিলেন কাদের শেখ। ভোট দিয়ে স্কুল থেকে বেরোতেই তাঁকে ঘিরে ধরে ছ’জন দুষ্কৃতী। খুব কাছ থেকে মাথায়-বুকে গুলি করা হয়। তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেন।
নবদ্বীপ হাসপাতাল চত্বরে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে সম্পূর্ণ একা কাঁদতে কাঁদতে কাদের শেখের স্ত্রীর অভিযোগ, “আমার মেয়ে ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে, ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দুপুরে আমার স্বামী ভোট দিতে গেলে আমিও সঙ্গে যাই। চোখের সামনেই ওরা ওঁকে মেরে ফেলল।” সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল বলেন, “পরিকল্পনা করে এই খুন। কাদের শেখ এক সময়ে এক বিধায়কের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কোনও কারণে পরে মনোমালিন্য হওয়ায় দুরত্ব বাড়ে। আমরা অপরাধীর শাস্তি চাই।” তপনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “কাদের শেখ কোনও দিনই তৃণমূল করেনি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাষ্ঠশালীর উত্তরচুপি গ্রামের কাদের শেখের নামে আটটি খুনের মামলা রয়েছে। তার মধ্যে মাজিদা গ্রামের আব্দুল মল্লিককে খুন অন্যতম। তৃণমূল বিধায়ক তপনবাবুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সে দিন তপনবাবুর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীই তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বিপুল পরিমাণ গাঁজাও পাওয়া গিয়েছিল কাদেরের বাড়িতে। জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দিন দশেক আগে তিনি বাড়ি আসেন। এসডিপিও (কালনা) ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, “মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।” |