সুভাষ ঘরে ফেরে নাই। কিন্তু খোকন ফিরিতেছে...
খোকনের বাড়ি ২৩ নম্বরে, কিন্তু ধম্মকম্ম এত দিন সবই ছিল পাশের ২৪-এ। সেখানেই এত দিন উন্নয়ন, সংস্কৃতি, জনকল্যাণের চারা পুঁতে জল দিয়ে এসেছেন তিনি। সেই চারা যখন সবে পরিবর্তনের মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে, খোকন বদলি!
উপায় নেই। বর্ধমান পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এ বার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। শহর তৃণমূলের সভাপতি খোকন দাস তা নন। অতএব তাঁকে একটু সরে দাঁড়াতে হয়েছে। বেশি ঝুঁকি না নিয়ে তিনি সরেছেন পাশেই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। একে তো সেখানে তাঁর বাড়ি। তার উপরে, ২৪ নম্বরে তিনি কেমন কাজ করেছেন, তা-ও প্রায় আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়া যায়।
কিন্তু ঝুঁকি যে একেবারে নেই, তা নয়। কেননা গত বিধানসভা নির্বাচনে মূলত এই শহর নিয়ে গড়া বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে যে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে নিরুপম সেনকে হারিয়েছিলেন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, তার মধ্যে ২৩ নম্বরের অবদান মোটে ৩৫টি ভোটের লিড। জায়গাটা অতএব বছর দুই আগেও তৃণমূলের জন্য তেমন উর্বর ছিল না। সেই হিসেবে অন্তত কাগজে-কলমে লড়াইটা শক্ত। কিন্তু খোকন তাতে ডরাচ্ছেন না। বরং আগের ওয়ার্ডে করা উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বই ছাপিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে প্রচারে নেমে পড়েছেন। দলের তরফে নাম ঘোষণা হওয়ারও অনেক আগে। তাঁর বক্তব্য, “আগে আমি বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কাউন্সিলর হওয়ার আগে সেখানে রাস্তাঘাট তো দূরের কথা, বনজঙ্গল ছিল। সন্ধ্যা হতেই শেয়াল ডাকত। মানুষজন ঘরে ঢুকে পড়তেন। এখন সেই ওয়ার্ড দেখুন, কেমন আলো ঝলমলে। কত কাজ হয়েছে, সেটা মানুষই বলবেন।” |
আসলে গত দু’বছরে হাওয়ার বদলটা পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছেন খোকনবাবু। একে তো তিনিই সেই দুর্লভ কাউন্সিলরদের অন্যতম, যাঁরা এই সময়টায় পুরসভার পুরো বরাদ্দ পেয়েছেন এবং কাজে লাগিয়েছেন। এক সময়ে বিধায়ক রবিরঞ্জনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে তাঁর দু’হাত উপুড় করা সাহায্যও পেয়েছেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে পানীয় জলের পাম্প হাউস হয়েছে। খেলার মাঠ সংস্কার হয়েছে। দু’টি স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডকে নিয়ে বড় মাপের সাংস্কৃতিক উৎসব তো বছর-বছর করেই আসছেন।
সেই তুলনায় ২৩ নম্বরের উন্নয়ন ততটা দেখার মতো নয়। গত বারের সিপিএম কাউন্সিলার ইন্দ্রজিৎ ওঝাই সেখানে ফের দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, সাধ্য মতো যাবতীয় কাজই তিনি করেছেন। কিন্তু পাশাপাশি দু’টি ওয়ার্ডের ফারাক কার্যত খালি চোখেই দেখা যায়। সম্ভবত যে কারণে চিকিৎসক অভিজিত বসাক, কলেজ ছাত্র প্রদীপ হাজরা বা গৃহবধু দীপা মণ্ডলের মতো ২৩ নম্বরের অনেকেই মনে করছেন, “পাশের ওয়ার্ডে খোকনবাবুর কাজ চোখে পড়ছে। ওঁর বেশি সভা-টভা না করলেও চলত।”
তবে সেই আশ্বাসে খোকনবাবু হাত গুটিয়ে বসে নেই। দু’দিন আগেই মুকুল রায় এসে তাঁর জন্য সভা করে গিয়েছেন। ভয় পাচ্ছেন না কি? মোটে তো ৩৫ ভোটের লিড ছিল? “আরে দূর, দেখবেন, মার্জিন অনেক বাড়বে। সিপিএম তো ধুয়ে-মুছে সাফ” চওড়া হাসেন খোকন।
তা বটে! এলাকায় সিপিএম পার্টি অফিস দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। পুরভোটের আগেও তা খোলা সম্ভব হয়নি। প্রায় গা ঢাকা দিয়েই রয়েছেন ইন্দ্রজিৎবাবু। রথতলা পদ্মপুকুরের বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। তিনি কোথায় তা বলতে চাননি বাড়ির লোকজন। তবে ফোনে তিনি বলেন, “আমাকে তো প্রচারই করতে দেওয়া হচ্ছে না। দলীয় অফিসও খুলতে দেওয়া হচ্ছে না।” খোকনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “সিপিএমের প্রচারে কোনও বাধা নেই। ওরা যদি অফিস খুলতে চায় তো খুলুক না। কেউ তো ওদের কিছু বলতে যায়নি। আসলে ওদের সঙ্গে মানুষ নেই, তাই ওরা আমাকে সন্ত্রাস ছড়ানোর দায়ে দুষছে!”
খোকনবাবুর উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রসঙ্গে উঠতেই ইন্দ্রজিৎ মনে করিয়ে দেন তাঁদের হাতে পুরবোর্ড থাকার কথাও। তাঁর কথায়, “আমাদের বোর্ড খোকনবাবুকে উন্নয়নের কাজে যথাসম্ভব সাহায্য করেছে। অকৃতজ্ঞের মতো উনি সব ভুলে গিয়েছেন!” কে কী করেছে আর কে কী মনে রেখেছে, তার পরীক্ষা তো সামনেই। সে দিনই টের পাওয়া যাবে, ২৩ নম্বর অন্তত গুনগুনিয়েও বলছে কি না ওরে খোকন ঘরে আয়... |