মধ্যবয়স নয়, যৌবনের মধ্যাহ্ন।
চল্লিশ পেরোলেই চালশে-র ধারণা এমনিতেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে আম ভারতীয়ের কাছে। এ বার চল্লিশের কোঠা পার করে লিয়েন্ডার পেজের গ্র্যান্ড স্লাম জয় তাতে যেন আরও একটা শিলমোহর লাগাল। লিয়েন্ডার দাপটে ঘোষণা করলেন, ৪৩-এও তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চান। জিততে চান।
কী এর রহস্য? ৪৩ বছর বয়সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বিশ্বনাথন আনন্দ। কিন্তু তিনি খেলেন দাবা। মাথার খেলা। টেনিসের মতো পাওয়ার-কেন্দ্রিক খেলায় কী ভাবে বাজিমাত করছেন দু’কুড়ি পার করা লিয়েন্ডার?
লিয়েন্ডারকে অনেক দিন ধরে কাছ থেকে দেখেছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়। তাঁর কথায়, “জিনগত ভাবেই ও অসম্ভব ফিট। তবে তার সঙ্গে ফিট থাকার জন্য নিষ্ঠা এবং ফিট থাকার অদম্য ইচ্ছা থাকতে হবে, যেটা ওর ছিল।” লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজ মুম্বই থেকে ফোনে জানালেন, “জন্ম থেকেই লিয়েন্ডারের মাংসপেশির তন্তু খুব মজবুত। লিয়েন্ডার মানসিক ভাবেও খুব শক্ত ধাতুর মানুষ। লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রচণ্ড খাটেন।” খাটা মানে কিন্তু বেশি বয়সেও বেমক্কা প্রচুর পরিশ্রম করা নয়। ভেস পেজ জানাচ্ছেন, লিয়েন্ডার শরীরকে কষ্ট দিয়ে পরিশ্রম করেন না। বরং জোর দেন সাঁতার আর সাইক্লিংয়ে। লিয়েন্ডারের মা জেনিফারও ৩১ বছর বয়সে জাতীয় বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন।
এর পাশাপাশি ক্রীড়ামোদীরা তুলে আনছেন আরও কিছু নাম সচিন তেন্ডুলকর, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, পাওলো মালদিনি। এঁদের মধ্যে মার্টিনা এক সময় লিয়েন্ডারের সঙ্গেই জুড়ি বেঁধেছিলেন। |
উৎসাহীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বেশি বয়সেও শারীরিক সক্ষমতার এমন চমকপ্রদ নজির অন্যান্য ক্ষেত্রেও রয়েছে। হাতের কাছেই ‘সুপারহিট’ উদাহরণ, দুই দক্ষিণী তারকা রজনীকান্ত এবং কমল হাসন। ৬২ বছরের রজনীকান্তের নতুন ছবির ট্রেলর ইউটিউবে বেরনোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ ‘হিট’। এই ‘কোছাড়াইয়ান’ ছবিতেও রজনী বরাবরের মতো অ্যাকশন হিরো-ই। ৫৮ বছরের কমলও দিব্যি ‘বিশ্বরূপম’ দেখাচ্ছেন। মেয়ের বয়সী নায়িকাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাচছেন, অত্যাধুনিক স্টান্ট করছেন। চল্লিশ পার করেই শাহরুখ-আমিররা কেউ সিক্স প্যাক, কেউ এইট প্যাক গড়ছেন। ৫০ পার করা বাংলার প্রসেনজিতের শারীরিক ফিটনেসও দেখার মতো। ‘বিক্রম সিংহ’-তে তাঁর ঝুলে থাকা স্টান্ট অনেকেরই চোখ কপালে তুলেছে।
কোন মন্ত্রে এমন চমক দেখাচ্ছেন তাঁরা? চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের মতে, “যাঁরা চল্লিশ পেরোনোর পরেও অভিনয়-খেলাধুলোর মতো শারীরিক পরিশ্রমের কাজে সফল, দেখবেন তাঁরা প্রায় কেউই অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপান করেন না। পৃথিবী রসাতলে গেলেও প্রাণায়াম এবং শরীরচর্চা বাদ দেন না।” সার্বিক ভাবেই চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, ‘হিউম্যান পোটেনশিয়াল’ বা মানুষের কর্মক্ষমতা ক্রমশই বিস্তৃত হচ্ছে। পঞ্চাশের দোরগোড়ায় থাকা বসন্ত সিংহ রায় তাই এখনও নতুন নতুন শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন দেখেন। চল্লিশ পেরনো দেবশঙ্কর হালদার এক সঙ্গে চার-পাঁচটা নাটকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে চলেন।
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটকের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে কার্টিলেজ ক্ষয় হয়, মাংসপেশি দুর্বল হতে থাকে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা কমার আশঙ্কা থাকে ঠিকই। কিন্তু সুষম আহার, কার্ডিও এক্সারসাইজ এবং মাংসপেশির ব্যায়াম করে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মেডিসিন চিকিৎসক অলোকেন্দু ঘোষ বললেন, “নিয়মিত স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ এবং প্রাণায়াম। খুব অল্প বয়স থেকে এই দু’টো করলে ১০০ বছরেও চাঙ্গা থাকা সম্ভব।” বার্ধক্যের চিন্তা মাথায় বসতেই দেন না লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই আটাত্তরেও প্রত্যেক দিন দু’বারে ১২৬টা ডনবৈঠক দেন। ডাম্বেল ভাঁজেন। সত্তরের শেষার্ধে পৌঁছেও চুটিয়ে পর্দায়-মঞ্চে অভিনয় বজায় রেখেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘রাজা লিয়ারে’র মতো শ্রমসাধ্য নাটকও করেছেন। “আমার ক্ষেত্রে এটা একটা অভ্যাস, একটা বাধ্যবাধকতাও বটে। এটা না-করলে আমাকে বসে যেতে হবে। বাড়িতে হালকা ব্যায়াম করি, খাবারদাবারেও অনেক বাধানিষেধ মেনে চলতে হয়,” বললেন সৌমিত্র। আর হৈমন্তী শুক্লা প্রশ্ন শুনেই প্রাণ খুলে হেসে নিলেন। “ঠিকই। আমার গলা টেলিফোনে শুনে অনেকেই বলেন, বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে। লতাজি-আশাজিকে দেখুন, সত্তর পেরিয়েও উনিশ বছরের নায়িকার কণ্ঠে গেয়েছেন। এটা কিছুটা জিনগত বা ঈশ্বরদত্ত, বাকিটা চর্চার দান।”
কী রকম চর্চা? ইএনটি চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গলাকে অযথা চাপ না-দেওয়া অনেকটা সাহায্য করে। লতাজি বা আশাজিকে কখনও টানা কথা বলতে বা চিৎকার করে ভাষণ দিতে দেখা যায়নি।” কিন্তু সেটাই যাঁদের কাজ? তাঁদেরো আছে ফিটনেস মন্ত্র। তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ষাট পেরিয়েও মারাত্মক ফিট। কী করে এত ধকল নেন? সুব্রতবাবুর টিপস, “দুশ্চিন্তা-টেনশনকে আমি বাড়ির সিঁড়িতে ফেলে আসি। রোজ সকালে এক ঘণ্টা যোগব্যায়াম করি আর পরিমিত খাই।” বামফ্রন্টের এক প্রথম সারির নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রীর বয়স এখন ৬৫। লম্বা ছিপছিপে শরীর, কালো চুল, চেন স্মোকার। সারাদিন পার্টির কাজে চরকিবাজি খেয়েও প্রবল ফিট। রহস্যটা কী? তিনি বললেন, “জেনেটিক ব্যাপার কিছুটা আছে। আর আছে লোভ সম্বরণ। দুপুরে ভাত খাওয়াটা ছেড়ে দিয়েছি। মুড়ি-বাদাম খাই। ৫৫ পর্যন্ত ব্যায়াম করেছি। তাতেই এই রকম আছি।”
চিকিৎসকেরাও অনেকেই বলছেন, একটু বুদ্ধি করে চললে ২০ বছরের ফিটনেস অবশ্যই ৪০-এ ধরে রাখা যায়। সাঁতারু বুলা চৌধুরীর মতে, “নিজেকে ফিট রাখাটা আসলে একটা নেশার মতো। আমি নিজে বাচ্চা হওয়ার পর টুর্নামেন্ট জিতেছি। নিষ্ঠা আর জেদ থাকলে শরীরকে ধরে রাখা যাবেই।” চিন্ময়বাবুর কথায়, “চর্চা চালিয়ে গেলে হয়তো একটা সময়ের পর স্পিড বাড়বে না। কিন্তু স্ট্যামিনা বাড়বেই। লিয়েন্ডার যেমন দৌড়োনো কম করে স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ বাড়িয়ে দিয়েছেন।”
লিয়েন্ডার কি রজনীকান্ত নাহয় সেলিব্রিটি! কিন্তু যুগের হাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আজকাল সামগ্রিক ভাবে ‘তরুণ’ থাকার একটা ইতিবাচক হিড়িক পড়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের বয়সের গড় যেমন বাড়ছে তেমনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে যৌবন। পরিমিত খাওয়া আর নিয়মিত শরীরচর্চা বাড়ছে, নিজেকে বুড়ো না-ভাবার মন তৈরি হচ্ছে। ফলে তারুণ্য অক্ষুণ্ণ থাকছে ষাট পার করা শরীরেও। মনোবিদ চল্লিশ পার করেও মধ্যাহ্নের গনগনে সূর্য হতে চাওয়ার সেই ইচ্ছেটাই আরও একবার চাগিয়ে দিয়ে গেলেন লিয়েন্ডার।
|
শিলিগুড়ি পুর এলাকা, মাটিগাড়া ও শিবমন্দিরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন শিলিগুড়ির নতুন মহকুমাশাসক দীপপ্রিয়া। পরিস্থিতি দেখে মহকুমাশাসক সোমবার জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শনিবার পর্যন্ত শিলিগুড়ি পুর এলাকা ও মহকুমা মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮০ দাঁড়িয়েছে। শহর সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ, ডাবগ্রাম এলাকা নিয়ে সংখ্যাটা ৪৫০। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক বলেন, “আমি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছি। সোমবার বৈঠক ডাকা হয়েছে।” এ দিন শিলিগুড়ি টিকিয়াপাড়ায় ও মাটিগাড়ায় দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে শিবির করা হয়েছিল। তাতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ঘোগোমালিতে একটি শিবির করা হয়েছে। তাতে ১৬ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী রক্ত পরীক্ষা করাতে আসেন। তবে কারও রক্তেই ডেঙ্গির জীবানু মেলেনি। জলপাইগুড়ি জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ কুমার শর্মা বলেন, ‘‘ডেঙ্গির বিরুদ্ধে প্রচার ও শিবির লাগাতার চলবে।” এ দিন শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া সহ ৪০টি জায়গায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডেঙ্গির বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালায়।
|