র্যাগিং-এর জেরে ছাত্রী-মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় নানা মহলে যখন তোলপাড় চলছে, তখনই হুগলির দু’টি কলেজে ‘র্যাগিং’-এর ঘটনা সামনে এল। একটি শ্রীরামপুরের টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজে, অন্যটি আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে। দু’টি কলেজেই কড়া পদক্ষেপ করেছেন কর্তৃপক্ষ। শ্রীরামপুরের কলেজটির অভিযুক্ত চার ছাত্রকে শনিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরামবাগের কলেজটির অভিযুক্ত ২২ জনকে এ দিনই হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীরামপুরের কলেজটির আইটি দ্বিতীয় বর্ষের যে ছাত্র ‘র্যাগিং’-এর অভিযোগ করেছেন তাঁর নাম অরিজিৎ সিকদার। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার পলতায়। গত ২৭ অগস্ট ভর্তি হওয়ার পরে কলেজের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করছেন। তাঁর অভিযোগ, শুরুর দিকে হস্টেলের তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের কয়েক জন ‘দাদা’ তাঁকে জোর করে নাচ-গান করাত। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ‘দাদা’দের মদ-সিগারেট এনে দেওয়ার পরে, প্রায় ছ’ঘণ্টা তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। ওই দিন অরিজিতের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে এক ‘দাদা’ অরিজিতের কাছে তাঁর বিভাগের ছাত্রীদের নাম-ঠিকানার তালিকা তৈরি দেওয়ার দাবি জানায় এবং না পারলে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে অরিজিৎ বাড়ি ফিরে যান।
মঙ্গলবার অরিজিতের বাবা অধীররঞ্জনবাবু এবং মা শেফালিদেবী শ্রীরামপুরে এসে হস্টেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে ছেলের উপরে ‘র্যাগিং’-এর মৌখিক অভিযোগ জানান। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি)-কে ই-মেল করে গোটা ঘটনা জানান অরিজিৎ। শুক্রবার ইউজিসি-র তরফে অরিজিৎ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শনিবার অরিজিৎ অধ্যক্ষ তথা কলেজের ‘অ্যান্টিং র্যাগিং কমিটি’র চেয়ারম্যান সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তৃতীয় বর্ষের অনুরাগ মহান্তি ও অপূর্ব তালুকদার এবং চতুর্থ বর্ষের গোবিন্দ শীল ও পিন্টু রজকের বিরুদ্ধে ‘র্যাগিং’য়ের লিখিত অভিযোগ জানান। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই চার জনকে গ্রেফতার করে। অরিজিতের মা শেফালিদেবী বলেন, “আমি চাই না অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি হোক। ওরাও তো ছাত্র।”
আরামবাগের কলেজটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের কিছু ছাত্র সোমবার রাতে হস্টেলে ভূগোল অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র সঞ্জীব অধিকারীর উপরে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। তার পরে সঞ্জীব বাঁকুড়ার মদনমোহনপুরে বাড়ি ফিরে যান। শনিবার ওই ছাত্র এবং তাঁর বাবা ক্ষীরোদ অধিকারী অধ্যক্ষ অসীম দে-র কাছে ২২ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ জানান।
সঞ্জীবের অভিযোগ, “সোমবার দাদারা ঘুম থেকে তুলে অনেক ক্ষণ চোখে জোরালো আলো ফেলে রাখে। কান ধরে ওঠবোস করায়। চলছিল কটূক্তি। অশালীন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় রড দিয়ে খোঁচানো হয়।” অধ্যক্ষ বলেন, “ওই রাতে ছাত্রটির মোবাইলে ভয়েস-রেকর্ডার খোলা ছিল। তাতে কথোপকথন ধরা পড়েছে।” |