লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণের
আইন ফিরিয়ে দিল দিল্লি
প্রায় সাড়ে চার মাস বাদে বেআইনি লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের তৈরি করা আইনটি ফেরত পাঠিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সঙ্গে বেশ কিছু অদলবদলের সুপারিশ। দিল্লির তরফে বলা হয়েছে, ওই বিষয়গুলি আইনে অন্তর্ভুক্ত করে তা নতুন ভাবে বিধানসভায় পেশ করা হোক। তার পরে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য আবার দিল্লি পাঠানো হোক।
সারদা-কাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী যেখানে দ্রুত আইন তৈরির কথা বলেছিলেন, সেখানে এই ঘটনা লগ্নি সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণে বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সারদা নিয়ে বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। সে জন্য কমিশনের ক্ষমতা আরও বাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন আইন তৈরিতে দেরি হলেও অবস্থা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। লগ্নি সংস্থা নিয়ে আমানতকারীরা কমিশনেই অভিযোগ জানাতে পারবেন।
গত সপ্তাহেই বিলটি ফেরত পাঠিয়ে দিল্লি মহাকরণকে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবগুলি যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। তার পর সংশোধিত বিলটি বিধানসভায় পেশ করে ফের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে রাজ্যকে। দু’দিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকে ৩০ এপ্রিল বেআইনি লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিলটি পাশ করে রাজ্য। সেই বিলটিকেই অসম্পূর্ণ বলে মত দিয়েছে কেন্দ্র। এর ফলে সংশোধনী এনে বিলটি ফের পাশ করাতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন অর্থ এবং আইন দফতরের কর্তারা। তাতেও কি সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের ছাড়পত্র এবং তার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মিলবে? অতীতের উদাহরণ দিয়ে রাজ্য আইন দফতরের এক কর্তা জানান, ২০০৩ থেকে বিলটি নিয়ে কেন্দ্র আর রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। রাজ্য যে প্রস্তাবই দেয়, কেন্দ্র কোনও না কোনও যুক্তি দেখিয়ে তা ফেরত পাঠায়। এর পরে যে তারা ছাড়পত্র দেবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
সাড়ে চার মাস পরে এ ভাবে বিলটি ফেরত পাঠানোয় তাই মুখ্যমন্ত্রীও বেজায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রের উপরে। কিন্তু এই মুহূর্তে দিল্লির কথা মেনে নতুন বিল পেশ ছাড়া যে উপায় নেই, সে কথা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। তিনি বলেন, “লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনটি দ্রুত পাশ করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্র তা নতুন করে বিধানসভায় পেশ করতে বলেছে। আমরা নিরুপায়। কী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।”
দফতর সূত্রের খবর: রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেতে রাজ্য এতটাই তৎপর ছিল যে, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের অনুমোদন নিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে বসেই রাজ্যপাল সেদিন বিলে সম্মতি দিয়েছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল বিল পাশের পর মে মাসের গোড়াতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বিলটি পাঠিয়ে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী বিলটি খতিয়ে দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়। মুখ্যমন্ত্রীও আশাবাদী ছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিলটি অনুমোদন করে দেবেন রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু এর পর থেকেই বিল নিয়ে পরপর দিল্লি থেকে চিঠি আসতে শুরু করে। গত ৪ জুন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রাজ্যের বিলটিতে তিনটি বিষয় অর্ন্তভুক্ত করতে বলে। এক, এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য যে বিশেষ আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে, সেই আদালতের বিচারককে অর্থলগ্নি সংস্থার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার দিতে হবে। প্রয়োজনে ভিন রাজ্যের অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকারও দিতে হবে। তামিলনাড়ুর এ সংক্রান্ত আইনে এই ব্যবস্থা আছে। দুই, কোনও ভাবেই অভিযুক্তদের আগাম জামিন দেওয়া চলবে না। বিহার এবং মধ্যপ্রদেশের আইনে এই বিষয়টি রয়েছে। তিন, আইনে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে মোটা টাকা জরিমানা দিয়ে কারাবাস এড়াতে পারেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এর উদ্দেশ্য, লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই জরিমানা কাজে লাগানো।
অর্থ মন্ত্রকের এই প্রাথমিক প্রস্তাবে রাজ্যের আপত্তি ছিল না। ৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন, “কেন্দ্র যে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা কেন্দ্রকে জানিয়ে দিচ্ছি, আইনে বিষয়গুলি নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই আমরা তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করে নেব।”
সরকারি সূত্রের খবর, এর পর ১০ জুন অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগ বিলটিতে আরও কয়েকটি খামতির কথা জানায়। তাতে বলা হয়, রাজ্যের আইনে অর্থলগ্নি সংস্থা প্রতারণা করলে তবে
ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংস্থা যখন বাজার থেকে টাকা তোলা শুরু করে, নিয়ন্ত্রণটা তখন থেকেই জরুরি। আইনে এমন সংস্থান রাখা হোক যাতে টাকা তোলার জন্য সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো রাজ্যের অনুমতিও নিতে হবে। সেই ব্যবস্থা থাকলে সংস্থাগুলি কারবার শুরুর সময় থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য রাজ্যকে জানাতে বাধ্য থাকবে আর প্রথম থেকেই তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখাও সম্ভব হবে। যারা তথ্য জানাবে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সংস্থানও আইনে রাখতে পরামর্শ দেয় কেন্দ্র।
রাজ্য আইন দফতরের ওই কর্তার বক্তব্য, কেন্দ্রের তোলা যাবতীয় প্রশ্ন মেনে নেওয়া হয়। দিল্লি এখন তা সংশোধন করে নতুন আইন করতে বলেছে। যা সময়সাপেক্ষ কাজ। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, যে কোনও আইনই শক্তিশালী করে গড়ে তোলায়ই দিল্লির লক্ষ্য। সে জন্য অন্য রাজ্যের এই সংক্রান্ত আইনগুলির ভাল অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আইনটিকে আরও কঠোর করতে বলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে সারদায় ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের মাধ্যমেই হচ্ছে। ফলে লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ আইনটি নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। এক বার যখন ফেরতই এসেছে, তখন আরও সময় নিয়ে আইনটি পরে বিধানসভায় পেশ করা হবে। রাজ্য অর্থ ও আইন দফতর এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.