টায়ার কর্পোরেশনের কর্মী এবং অফিসারেরা গত প্রায় ১ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এ দিকে কর্তৃপক্ষ তাঁদের স্বেচ্ছাবসর দিতেও নারাজ। এই অবস্থায় পুজোর মুখে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সংস্থার কর্মীরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত টায়ার কর্পোরেশনের নাম ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিলগ্নিকরণ তালিকায় উঠে গিয়েছে। সংস্থাটিতে বর্তমানে কোনও উত্পাদনও হচ্ছে না। উত্পাদন বন্ধ ২০১২ সালের অগস্ট মাস থেকে। সংস্থার স্থায়ী কর্মী এবং অফিসারের সংখ্যা ১১২ হলেও ঠিকাদারের কর্মীদের নিয়ে মোট সংখ্যাটি সাড়ে ৮০০-রও বেশি। ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না।
এ দিকে টায়ার কর্পোরেশনের অফিসারেরা নতুন একটি সমস্যার মুখে পড়েছেন। এমনিতে তো তাঁরাও বেতন পাচ্ছেন না। উপরন্তু সাধারণ কর্মীরা তাঁদের উপর হামলা করছেন বলে অভিযোগ সংস্থার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনের সেক্রেটারি অনুপ হোমরায় বলেন, গত ডিসেম্বর মাস থেকে সিএমডি-সহ সংস্থার সমস্ত বড় অফিসার দফতরমুখো হচ্ছেন না। কর্মীরা তাঁদের অভিযোগ জানানোর মতো কাউকে পাচ্ছেন না। ফলে সামনে অফিসারদের পেলে তাঁদের উপরেই চড়াও হচ্ছেন বলে দাবি। অনুপবাবু বলেন, “আমরা সাধারণ অফিসার। কর্মীদের বাধায় আমরা কারখানায় ঢুকতেও পারছি না। অথচ আমাদের কিছুই করার নেই।”
যে-সব কর্মী এবং অফিসার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অবসর নিয়েছেন, তাঁরা পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড কিছুই পাননি বলে অভিযোগ করেন অনুপবাবু। বর্তমান কর্মীদের মধ্যে ৮৮ জনই স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। |
কর্মীদের দুরবস্থার কথা সিমডি-সহ সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে মন্তব্য করেন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েনের কার্যকরী সভাপতি এবং তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের নেতা প্রমথেশ সেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার যদি সংস্থাটি চালাতে না-চায়, তা হলে কর্মী ও অফিসারদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে দিক। তাঁরা স্বেচ্ছাবসর নিতে রাজি। কর্তৃপক্ষের কাছে সেই আবেদনও করেছেন। আর কর্তৃপক্ষ যদি স্বেচ্ছাবসর দিতে না-চান, তা হলে বেতন দেওয়া শুরু করুন। বেতনও দেবেন না, আবার স্বেচ্ছাবসরও দেবেন না, এই অবস্থা চলতে পারে না। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না-নিলে আমরা টায়ার কর্পোরেশন নিয়ে বড় মাপের আন্দোলন শুরু করব।”
ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কর্মী এবং অফিসারদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার প্রস্তাব তাঁদের হাতে পৌঁছেছে বলে কবুল করেছেন টায়ার কর্পোরেশনের ডিরেক্টর এস কে সিংহ। তিনি সংস্থাটিতে কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত ডিরেক্টর হিসাবে রয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বেচ্ছাবসর সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্প্রতি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার বিবেচনা করে দেখছে।” একই ভাবে বকেয়া বেতন মেটানোর বিষয়টিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারই বিবেচ্য বিষয় বলে মন্তব্য করেন সিংহ।
টায়ার কর্পোরেশনের কারখানাটি কাঁকিনাড়ায় অবস্থিত। এক সময়ে সেখানে দিনে ১২০০-র মতো টায়ার উত্পাদন হত। তবে সংস্থার নিজস্ব উত্পাদন অবশ্য বন্ধ প্রায় বছর দশেক আগে থেকেই। জেকে, সিয়াট, বিড়লা, অ্যাপোলো ইত্যাদি সংস্থার জন্য টায়ার তৈরি করেই উত্পাদন চালু রাখা হয়েছিল। সেটাও বন্ধ হয়ে যায় ২০১২ সালের অগস্ট মাস থেকে। |