পুজোর আগেই সল্টলেককে জঞ্জালমুক্ত করতে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। প্রায় আড়াইশো অতিরিক্ত কর্মীকে পথে নামিয়ে দ্রুত শহর সাফ করার বিশেষ অভিযানে সাফল্য মিলবে বলেই পুরপ্রশাসনের দাবি। পাশাপাশি, সল্টলেকের আবর্জনা-সমস্যায় বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবও ধরা পড়েছে।
বর্তমান সল্টলেক পুরবোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরে জঞ্জালমুক্ত শহর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে কাজ শুরুও হয়েছিল। সাফল্যও এসেছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি। তবে ফের শহর জঞ্জালময় হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রশাসনের বক্তব্য, সাময়িক সমস্যা। বছরভর শহর আগের থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার থাকে।
সম্প্রতি বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবের এই ছবি ধরা পড়ল। সকাল ১১টা। লাবণি আইল্যান্ড থেকে সল্টলেক পুরসভার রাস্তা ধরে এগোতে এক মহিলাকে দেখা গেল চারটি প্লাস্টিক-ভর্তি আবর্জনা রাস্তার ধারে ফেলতে। কেন এ ভাবে ময়লা ফেলছেন? “সকালে বাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে গিয়েছে। কিছু বাকি ছিল। কিন্তু কাল সকালের আগে ময়লা নিতে আসবে না। তাই ফেললাম,” জবাব ওই মহিলার। |
একই ছবি বেলা ১২টায়। পিএনবির মোড় থেকে বৈশাখীর দিকে যেতে রাস্তায় আবর্জনা ফেলতে চোখে পড়ল এক বেসরকারি সংস্থার কর্মীকে। তাঁরও জবাব, “আশেপাশে ভ্যাট নেই। বুলেভার্ডের কাছেই সকলে ময়লা জড়ো করে। তাই আমিও ফেললাম।” দুপুর ২টোয় করুণাময়ী মোড়ের কাছে এক দোকানের কর্মী আবর্জনা রাস্তার ধারেই জড়ো করলেন। বললেন, “এখানেই ময়লা জড়ো করি। পরে পুরসভার কর্মীরা গাড়িতে করে নিয়ে যান।” যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার, করুণাময়ীর ওই দোকানের কাছে গিয়ে আবর্জনা পড়েই থাকতে দেখা গেল।
সল্টলেকের একাধিক জায়গায় দিনভর অসচেতনতার এমনই ছবি দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচারীরা। কর্মসূত্রে সল্টলেকে রোজ যাতায়াত করেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা নিমাই সাহা। বললেন, “সল্টলেকের অফিসপাড়ায় রোজই এমন ছবি দেখি। শুধু প্রশাসনকে বলে লাভ নেই। আমরাই সচেতন নই।”
পুরসভা-সূত্রে খবর, রোজ সল্টলেক থেকে প্রায় ১২৫ মেট্রিক টনের মতো আবর্জনা জড়ো হয়। ৩৫টি গাড়ির মাধ্যমে সেগুলি রোজ মোল্লারভেড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। এর মধ্যে বাড়ির আবর্জনা ও রাস্তার ধারে ফেলা আবর্জনা রয়েছে। পুরসভার তরফে কি কোনও গাফিলতি নেই?
চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবাশিস জানা বললেন, “জঞ্জাল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা হয়েছে। আগের থেকে বেশি করে সাফাইয়ের কাজও হচ্ছে। তবে সরকারি প্রকল্পের কাজ চলছে। গাছ-ছাঁটার কাজও চলছে। ফলে কিছুদিন সমস্যা হচ্ছে। মানুষ আরও সচেতন হলে শহর জঞ্জালমুক্ত করতে সমস্যা হবে না।” তিনি জানান, কিছু দিনের মধ্যেই আড়াইশো অতিরিক্ত কর্মী নামিয়ে শহর সাফের বিশেষ অভিযান চালানো হবে। অভিযান পুজো পর্যন্ত চলবে বলে তিনি জানান।
বাসিন্দাদের সংগঠন সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুরসভা চেষ্টা করছে। তবে পরিকল্পনা থাকলেও তার প্রয়োগে কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে। তার জন্য আমরাও সমানভাবে দায়ী। শহর পরিষ্কার রাখতে গেলে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।” |