আদালতে ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। এ বার সমবায় আইন সংশোধন নিয়ে। যে সংশোধনীটির সুবাদে বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলী ভেঙে দিয়ে সরকার প্রশাসক বসিয়েছিল, শুক্রবার সেটি খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের সংশোধিত সমবায় আইনকে ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’ হিসেবে অভিহিত করে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার এ দিন মন্তব্য করেছেন, “হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে রাজ্য সরকার সমবায় আইন সংশোধন করেছে! এতেই বোঝা যায়, রাজ্য বিধানসভা কী ভাবে চলছে!”
প্রসঙ্গত প্রায় এক বছর আগে হাইকোর্টই সংশোধনীটি নাকচ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার প্রথমে অর্ডিন্যান্স ও পরে বিধানসভায় পাশ করিয়ে সেটি কার্যকর করে।
এ দিন সেই অর্ডিন্যান্স ও সংশোধনী, দু’টোই খারিজ করেছে হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করার জন্য রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায়। বিচারপতি সমাদ্দার তা-ও নাকচ করে দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের খবর, এই নিয়ে সাম্প্রতিক কালে শুধু কলকাতা হাইকোর্টেই এগারোটি মামলায় রাজ্য সরকার পরাজিত হল।
১৯৮৩-তে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি ও সমবায় আইন তৈরি হয়। রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট জমানা। আইনে বলা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমবায় সমিতির পরিচালকমণ্ডলী নির্বাচিত করতে হবে, এবং নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলীর মেয়াদ হবে তিন বছর। ২০০৬-এ ওই আইন সংশোধন করে পরিচালকমণ্ডলীর কার্যকাল বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। ২০১১-য় রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে আইনটিতে আর এক দফা সংশোধন করে নতুন সরকার। নয়া সংশোধনীতে নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলীর মেয়াদ আবার কমিয়ে তিন বছর করে দেওয়া হয়। |
হারের মামলানামা* |
সিঙ্গুর
এমডি-এমএসে ভর্তি
হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ
মাদ্রাসায় শিক্ষাকর্মী নিয়োগ
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ
মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ |
প্রবেশ কর
গুড়াপ হোম-হত্যা**
ধনেখালি-কাণ্ড**
প্রদীপ তা হত্যা-তদন্ত
সমবায় আইন সংশোধন |
* হাইকোর্টে রাজ্যের হার
**সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ
|
|
আর সরকার সেই সংশোধিত আইন প্রয়োগ করেই রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলী ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসিয়ে দিয়েছে। যে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গত বছর কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিল একাধিক সমবায় সমিতি। তাদের হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিচারপতি সমাদ্দারের এজলাসে শুনানি শুরু হয়। বিকাশবাবু সওয়ালে অভিযোগ করেন, সমবায় সমিতির নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলী ভেঙে প্রশাসক বসানোর সরকারি সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত। অ্যাডভোকেট জেনারেল পাল্টা বলেন, সমবায় সমিতিগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বহু সমিতি দেনায় দায়ে ডুবে। সেই কারণেই রাজ্য সরকার সমবায় আইন সংশোধন করেছে বলে সওয়ালে দাবি করেছিলেন এজি।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সরকারের সংশোধিত আইন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সেটা ছিল ২০১২-র ১৭ অক্টোবর। সরকার তা অগ্রাহ্য করে প্রথমে অর্ডিন্যান্স জারি করে। পরে, গত অগস্টে সমবায় আইনের সংশোধনীটি বিধানসভায় পাস করিয়ে নেয়। এর বিরুদ্ধে বিকাশবাবু ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতকে তিনি জানান, সমবায় সমিতি চাঙ্গা করতে সম্প্রতি দিল্লির সরকার কেন্দ্রীয় সমবায় আইন সংশোধন করেছে। তাতে পরিচালকমণ্ডলীর মেয়াদ বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। “কেন্দ্রীয় আইনে মেয়াদ যেখানে পাঁচ বছর, সেখানে রাজ্য সরকার কী ভাবে তা তিন বছরে নামিয়ে আনল?” প্রশ্ন তুলেছিলেন বিকাশবাবু।
সেই মামলাতেই বিধানসভায় পাস হওয়া সংশোধনী ও অর্ডিন্যান্স দু’টোই এ দিন খারিজ করে দিলেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। তাঁর রায় শুনে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যে এ বার সমবায় আন্দোলন আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।”
অশোকবাবুর অভিযোগ, সরকারের নতুন আইন ও সংশোধনীর দরুণ রাজ্যের অর্ধেক সমবায়ে কোনও কাজ হচ্ছে না। তবে রায়ে স্থগিতাদেশের আর্জিও হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ায় সেগুলি অবিলম্বে সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অশোকবাবু।
|