|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
নেতাজিকে ফিরে পাওয়া |
‘দ্য লাস্ট হিরো’। সম্ভবত এই প্রথম মঞ্চে। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ। |
‘দ্য লাস্ট হিরো’। তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সম্ভবত এই প্রথম তিনি মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন এবং কিছু বিতর্কিত প্রসঙ্গকে সামনে রেখে। যেমন? ১৫ অগস্ট ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার দিন তিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না, এমনকী ছিলেন না কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও। যেখানে দেশভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবুও এই নাটকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবে সে সব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা বহু চরিত্রও রয়েছে এই নাটকে। গাঁধীজি, জওহরলাল, মহম্মদ আলি জিন্না থেকে হিটলার বা তোজো।
এই নাটকের একটি দৃশ্যে নেতাজি বিনীত ভাবে গাঁধীজিকে বলছেন, “বাপুজি, আমি সুভাষচন্দ্র বসু, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি, আমি কারও প্রতিচ্ছবি নই, প্রতিধ্বনি নই, কারও প্রটোটাইপ নইআই অ্যাম মাইসেলফ। আপনি আমায় আশীর্বাদ করুন আমি যেন আমার পথে সফল হই।’’ একটি দৃশ্যে সাহসী সংলাপে টানটান উত্তেজনা বেড়েছে নাটকে। কেমন? গাঁধীজিকে সরাসরি নেতাজি বলছেন, “অহিংসা একটা সময় পর্যন্ত নিশ্চয়ই ভাল ছিল সেটা আমি মানছি বাপু, তখন সেই সময়টা ছিল শান্ত। কিন্তু আজ আপনার এই অহিংসার বাণী কে শুনবে বলুন তো?” একটু বিরক্তির সুরে তিনি বললেন, “হুম্, আমার বলতে খুব খারাপ লাগছে সুভাষ, তোমার এই মানসিকতার জন্য কংগ্রেসের অনেকেই আজ আর তোমাকে পছন্দ করছে না।” প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই অনেক অজানা অথচ প্রকৃত বীরের সহজ সরল স্বীকারোক্তি। তাই নির্দ্বিধায় হিটলারকে বলছেন, “ইওর এক্সেলেন্সি, আমি সারা জীবন রাজনীতি নিয়েই আছি। গোটা পৃথিবীর বহু রাজনীতিকের জ্ঞান শুনেছি। নতুন করে জ্ঞান না শুনে সাহায্যের কথা শুনতে এখন আমি বেশি আগ্রহী।”
এই নাটকের সময়কাল ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত। নানা টানাপোড়েনের সেই মুহূর্তগুলো বারবার মঞ্চে উঠে আসছে একটির পর একটি দৃশ্যে। সুভাষ যখন বুঝলেন কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে জয় লাভ করলেও গাঁধীজি তাঁর জয়কে মেনে নিতে পারছেন না এবং ইংরেজের বিরুদ্ধে সুভাষের সরাসরি জেহাদকেও ভাল চোখে দেখছেন না, তখনই তিনি কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরাসরি ইস্তফা দিলেন। তখনই তৈরি হল ফরোয়ার্ড ব্লক। |
|
এই নাটকের নাট্যকার ও পরিচালক উৎসব দাস হঠাৎ এমন প্রযোজনা বেছে নিলেন কেন? “যে কাজ কেউই মঞ্চে করতে চাননি, আমি তা করেছি শুধু মাত্র বাঙালির আবেগের কথা মনে রেখে। নেতাজি এমনই এক চরিত্র যিনি যুগে যুগেও সমান জনপ্রিয়।” বললেন উৎসব। পরিচালক উৎসব দাস এই নাটকে নেতাজি ও এমিলির সম্পর্কটাও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কয়েকটি দৃশ্যে। নেতাজি বলছেন, “গত কয়েক বছরে তুমি একটুও বদলাওনি এমিলি।” এমিলির উত্তর, “ভালবাসার মানুষকে সবাই সুন্দরই দেখে। এটাকেই বোধহয় ভালবাসা বলে। জানো, এই ক’ বছরে কত প্রেম এসেছে আমার জীবনে। সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি।” এ এক অন্য রোমান্টিকতা।
অভিনয়ে প্রত্যেকেই নিজের সুনাম ধরে রেখেছেন। সৌগত কর্মকার (নেতাজি), অমল চক্রবর্তী (গাঁধীজি), দেবাশিস সেন, দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, সৌমিত্র ঘোষ, সুমন রায়চৌধুরী, রত্না ধর প্রমুখ। আলোয় বাবলু সরকার, আবহে সন্দীপ কর। মঞ্চ ভাবনায় হিরণ মিত্র। নাটকটির প্রযোজনায় মিউনাস। |
|
|
|
|
|