|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
জীবনযাপন ঠিকঠাক না হলে
তিরিশেও হাঁটু বদলাতে হবে
দশ হাজার হাঁটু প্রতিস্থাপনের পর এমনই মনে করেন
ডা.পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
|
প্র: আগে চল্লিশ পেরোলেই হত চালসে। এখন চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই হাঁটুর সমস্যা।
উ: চল্লিশ কেন, আরও কম বয়সে হাঁটুর সমস্যা হচ্ছে।
প্র: হাঁটু নিয়ে এত সমস্যা কেন?
উ: শহুরে জীবনযাপনের জন্যই এই অবস্থা। হাঁটু মুড়ে বসার অভ্যাসটাই তো চলে গেছে। সব মিলিয়ে সমস্যা এত বেশি হয় যে তিরিশ বছর বয়সেও হাঁটু বদল করতে হচ্ছে।
প্র: একেবারে হাঁটু বদল?
উ: ক্রমাগত চাপ পড়ায় ক্ষয় হতে হতে হাঁটুর বারোটা বাজে। পা শক্ত হয়ে বেঁকে যায়। চলাফেরায় কষ্ট, বাথরুম যাওয়া বন্ধ। এত বেশি ব্যথা যে রাতের ঘুমও চলে যায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তখন সমস্ত রকম ওষুধ ও ফিজিয়োথেরাপিতে কাজ না হলে হাঁটু বদলের কথা ভাবা হয়।
প্র: বিকল্প আর কিছু করা যায় না?
উ: এটা কিন্তু জীবনদায়ী কোনও অপারেশন নয়। কারও যদি লোকবল থাকে, ইচ্ছে করলে হুইল চেয়ারেও জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন।
প্র: হুইল চেয়ারে বাকি জীবন! সম্ভব নাকি?
উ: সেই জন্যই তো হাঁটু বদল। বলতে পারেন আবার নতুন করে শুরু করা।
প্র: কিন্তু শুনেছি হাঁটু বদল করেও লাভ হয় না। কয়েক বছর পর আবার যে কে সেই?
উ: কয়েক বছর নয়। ১৫-২০ বছর ভাল মতো চালিয়ে নিতে পারবেন।
প্র: তার মানে ৫০-এ হাঁটু বদলালে ৬৫-তে আবার হাঁটু বদলাতে হবে?
উ: ঠিক ৬৫ তে-ই করতে হবে তা নয়। আগেও হতে পারে আবার আরও বছর পাঁচেক পরেও হতে পারে। কুড়ি বছরেও কারও কিছু হয় না, আবার দশ বছরেই কারও সমস্যা শুরু হয়। তিন বার হাঁটু বদল হয়েছে, এমনও অনেকে আছেন। নির্ভর করছে হাঁটু প্রতিস্থাপনের পর কে কী রকম ভাবে জীবনযাপন করেছেন।
প্র: কী রকম?
উ: যত বেশি লাফালাফি-ঝাঁপাঝাঁপি করবেন, তত হাঁটুর ক্ষয় হবে। হাঁটুর আয়ুও ফুরিয়ে আসবে।
প্র: তার মানে হাঁটু বদলালে সব বন্ধ?
উ: সব আগের মতোই। একটু সাবধানে থাকতে হবে, যাতে হাঁটুর ওপর চাপ না পড়ে।
প্র: ধরুন যাঁরা অভিনয় করেন বা নাচ করেন অথবা একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করেন, বা বাড়িতে যাঁদের রান্না করতে হয়, তাঁরাও কি আগের জীবনে ফিরে আসতে পারবেন?
উ: ঢিমেতালে হালকা নাচ যেমন বলডান্স করা যেতেই পারে। কিন্তু ধুমধারাক্কা নাচ করা যাবে না। দাঁড়িয়ে কাজ করলে অসুবিধে নেই। সিঁড়িভাঙা এমনকী ট্রেকিং-এও অসুবিধে নেই। তবে গল্ফ খেললে সাবধানে খেলবেন। আসলে এমন কিছু করবেন না, যাতে হাঁটুর ওপর চাপ পড়ে। হাঁটু বদলের পর পশ্চিমি জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।
প্র: কী রকম?
উ: হাঁটু মুড়ে বসবেন না। ভাল করে এক্সারসাইজ করা দরকার। অনেকেই আছেন হাঁটতে চান না। নিয়মিত মর্নিংওয়াক করতে হবে। বেশি ওজন তুলবেন না। হেলদি জীবনযাপন বলতে যা বোঝায় আর কী।
প্র: তার পর পনেরো বছর পর আবার বদল?
উ: বাঁধাধরা নয়। অসুবিধে হলে, তবেই।
প্র: কী রকম অসুবিধে হয়?
উ: হাঁটুতে ব্যথা শুরু হবে। এক্স-রে’তে যদি দেখা যায় হাঁটুতে ক্ষয় শুরু হয়েছে, তখন আবার বদলের কথা ভাবতে হয়।
প্র: বিশাল খরচ তো?
উ: ভাল বিদেশি কৃত্রিম হাঁটুর দাম শুরু ৭৫,০০০ টাকা থেকে।
প্র: এই যে ফরেন বডি শরীরে ঢুকছে, কোনও সমস্যা হতে পারে তার থেকে?
উ: যাঁদের মেটালে অ্যালার্জি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সেরামিক কোটেড কৃত্রিম হাঁটু ব্যবহার করা হয়। অপারেশন ঠিক মতো করা হলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
প্র: হাঁটু অপারেশনের পর সেরে উঠতে কত দিন সময় লাগে?
উ: তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যান রোগী। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তিন থেকে ছয় মাস। কমবয়সিরা তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন। এক্সারসাইজ ভাল করে করতে হবে। দিনে সাত থেকে আট বার এক্সারসাইজ, সঙ্গে ফিজিয়োথেরাপি। এক্সারসাইজ না করলে তিন বছরেও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন না। তাই অপারেশনের পর দিন থেকেই এক্সারসাইজ শুরু করিয়ে দেওয়া হয়।
প্র: এত বড় অপারেশনের পর-পরই এক্সারসাইজ। ব্যথা হবে তো?
উ: মেরুদণ্ডে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে ব্লক করে হাঁটু অপারেশন করা হয়। ব্যথা যাতে না হয় তার জন্য সাময়িক ভাবে নার্ভ ব্লক করে দেওয়া হয়। তাতে দিন দুই ব্যথা থাকে না। পেনকিলারও কম লাগে। সেই দুই দিন শুয়ে শুয়েই এক্সারসাইজ। তিন দিনের দিন থেকে দাঁড় করিয়ে ওয়াকার নিয়ে হাঁটতে বলা হয়।
প্র: অপারেশনের পর আর কোনও অসুবিধে হয় না?
উ: এমনিতে নয়। তবে ইনফেকশন হলে মুশকিল। এ জন্য মডিউলার অপারেশন থিয়েটার আছে এ রকম হাসপাতালে অপারেশন করলে ভাল।
প্র: সেটা কী?
উ: এ ধরনের অপারেশন থিয়েটারে ইনফেকশনের সম্ভাবনা কম থাকে। ইনফেকশন এড়াতে রোগী বা তাঁর বাড়ির লোককেও সচেষ্ট হতে হবে। শরীরের অন্য কোথাও ইনফেকশন হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানাতে হবে, এবং সেই মতো অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে। এক বার ইনফেকশন হয়ে গেলে কিন্তু পুরো অপারেশনটাই জলে গেল।
প্র: এমনিতে হাঁটুকে ভাল রাখব কী করে সেটা বলুন?
উ: ছোট থেকেই হাঁটু মুড়ে বসা অভ্যাস করতে হবে। পবনমুক্তাসন-এর মতো কিছু ব্যায়াম করতে পারলে ভাল। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া। অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও তামাক জাতীয় জিনিস একেবারেই না।
প্র: ধূমপান বা অ্যালকোহল হাঁটুর কী ক্ষতি করল?
উ: ওগুলো সমগ্র শরীরেরই ক্ষতি করে।
প্র: হাঁটু মুড়ে যে বসতে বলছেন, আপনারাই তো বলেন ইন্ডিয়ান স্টাইল ব্যবহার না করে কমোড ব্যবহার করতে।
উ: সে তো হাঁটুর সমস্যা থাকলে বারণ করা হয়।
প্র: ইতিমধ্যেই যাঁদের হাঁটুতে ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে?
উ: হালকা এক্সারসাইজ করুন। শুকনো গরম-ঠান্ডা সেঁক দিন। ব্যথা বাড়লে প্যারাসিটামল খান। পা মুড়ে বসবেন না। ভারী ওজন নেবেন না। নিজের ওজন বেশি হলেও তা কমানোর চেষ্টা করুন।
প্র: মানে নিয়মিত ট্রেডমিল।
উ: হিতে বিপরীত হতে পারে। ওজন বেশি বলে ধাঁইধাঁই করে ট্রেডমিলে হাঁটতে শুরু করলে তাতেও হাঁটুর বারোটা বাজবে।
প্র: তবে?
উ: সাঁতার কাটুন। সাইক্লিং করুন। নইলে নরম জুতো পরে মর্নিংওয়াক। যা-ই করুন শরীরকে রইয়েসইয়ে।
প্র: এ সব করলে কি আর হাঁটু বদলাতে হবে না?
উ: এটা কেউ বলতে পারে না। তবে এগুলি নিয়মিত করলে অনেক ভাল থাকবেন। |
হাঁটু বদলের পর |
• হাঁটু মুড়ে বসবেন না
• অবশ্যই কোমড ব্যবহার করবেন
• লাফালাফি করবেন না
• গল্ফ খেলবেন সাবধানে
• অন্তত তিন মাস,
• নিয়মিত ১ কিমি হাঁটবেন
• বছরে এক বার এক্স-রে করে হাঁটুর অবস্থা দেখে নেবেন |
|
যোগাযোগ- ৯৩৩১০২৯৫৪৪ |
ছবি: কৌশিক সরকার |
|
|
|
|
|