দৃশ্য এক: ঘরের মেঝেতে জল থই থই করছে। খাটের উপরেই চলছে রান্না-খাওয়া। খাট পর্যন্ত জল উঠে গিয়েছে। গোটানো বিছানার পাশে রাখা বাসনপত্র। তারই পাশে খাটের উপরে রাখা আলনায় রয়েছে জামাকাপড়।
দৃশ্য দুই: প্লাস্টিকের ব্যাগে স্কুলের পোশাক। বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটুসমান জল ঠেলে পড়ুয়ারা চলছে স্কুলে। পাড়ার ক্লাবের সামনে চিলতে শুকনো জায়গায় পোশাক বদলে তার পরে স্কুলে যাওয়া।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের রানিয়া, নিবেদিতা পার্ক, প্রভাতপল্লি, নতুনপল্লি, গীতানগর, নবারুণপুর, উদয়নপল্লি, পূর্বাশা পার্ক, সুকান্তকানন-সহ ত্রিশফুট রাস্তা এবং পাওয়ার হাউস-সংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জলবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছেন। |
জলবন্দি বাসিন্দাদের দিন গুজরানের দু’টি মুহূর্ত। ছবি: অমরেশ চক্রবর্তী |
তাঁদের অভিযোগ, এই এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। সেই জল আর সরে না। বর্ষা গেলে রোদে জল শুকিয়ে শুকনো হয় এলাকা।
বাসিন্দা মুকুল দাস, শ্যামলী দে, পঙ্কজ দাস, দেবাশিস খামরাইয়ের অভিযোগ, এই সময়ে পরিশোধিত পানীয় জল পেতে কাল ঘাম ছুটে যায়। হাতে গোনা গুটিকয়েক টিউবওয়েলের উপরে এই এলাকার পানীয় জলের ব্যবস্থা নির্ভরশীল। সারা বছরই রাস্তার হালও খুব খারাপ থাকে। বর্ষার পরে রাস্তার অবস্থা এমন ভয়াবহ হয় যে হাঁটা যায় না। কলকাতা পুরসভার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া এই এলাকায় এখনও নিকাশি ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি।
এই এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা রানিয়া খালের উপরে নির্ভরশীল। বাসিন্দারা জানান, বছর দুয়েক আগে এক বার এই খাল সংস্কারের কাজ হয়েছিল। কিন্তু এখন আর খাল থেকে জল সরে না। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই খালের অনেক জায়গা দখল করে বাড়ি উঠে গিয়েছে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যার কথা জানি। অবিলম্বে সংস্কারের জন্য দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা খালটি পরিদর্শন করেছেন। বর্ষার জন্য কাজ করা যায়নি। পুজোর পরেই কাজ শুরু হবে।”
পুরো এলাকাই এখন দুর্গন্ধে ম ম করছে। বাসিন্দাদের দূষিত জল মাড়িয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। অভিযোগ, এর মধ্যেই এলাকার অনেক বাসিন্দার পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে পেটের রোগ আর জ্বর লেগেই রয়েছে। জলবন্দি অবস্থা থেকে এলাকার বাসিন্দারা এক বার এলাকায় ঢোকার রাস্তা অবরোধও করেন। বাসিন্দারা জানান, বাঁশদ্রোণীর গাছতলা থেকে এই এলাকায় আসতে রিকশাভাড়া লাগে ২০ টাকা। অটোভাড়া ন’টাকা। কিন্তু বর্ষার সময় রিকশাচালকরা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চান বলে অভিযোগ। অটোচালকেরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চান বলে অভিযোগ। যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের বিজলি দাস বলেন, “গত বছর যে রাস্তা করেছি এ বারের বৃষ্টিতে সেই রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে। বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। বোর্ড থেকে টাকা পেলে অবশ্যই এই ক্ষতি মেরামতের কাজ করব।” রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি। সমস্ত পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কারে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগমী এক বছরের মধ্যে রানিয়া এবং সংলগ্ন এলাকার চিত্রটাই বদলে যাবে।” |