পরিবর্তনের রং লেগেছে পুজোতেও! প্রতিমা শিল্পের আঁতুর ঘর, কৃষ্ণনগরে প্রতিমার অঙ্গসজ্জা থেকে আলোকসজ্জা সবেতেই কম বেশি পরিবর্তনের ছাপ। প্রতিমার সাজশিল্পে পরিবর্তনের প্রভাব চোখে পড়ার মতো।
কৃষ্ণনগরের চকেরপাড়া, নাজিরাপাড়া, আনন্দময়ীতলা জুড়ে ডাকের সাজ তৈরি হয়। বাগদিপাড়ায় হয় শোলার সাজ। চকের পাড়ার ডাকের সাজ শিল্পী আশিস বাগচি তাঁর সাজ নিয়ে ইংল্যান্ডের কার্নিভালেও যোগ দিয়েছেন। তিনি এখন ব্যস্ত সবুজ রঙের ডাকের সাজের মুকুট তৈরিতে। এ বছর কলকাতার প্রায় ২৯টি ক্লাব ও বারোয়ারি থেকে তিনি দুর্গার সাজ তৈরির ‘অর্ডার’ পেয়েছেন। আশিসবাবু বলছেন, “বছর দু’য়েক ধরে সবুজ রঙের ডাকের সাজের চাহিদা বাড়ছে। গত বছর একটি বানিয়েছিলাম। এ বছর সম্পূর্ণ সবুজ পাঁচটি ডাকের সাজ বানাচ্ছি।”
আশিসবাবুর কথায়, “রঙিন চিনা চুমকি বাজারে আসায় আমরা কম খরচে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সাজ দিতে পারছি। ভারতীয় রঙিন চুমকির দাম কিলোগ্রাম প্রতি দু’হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। সেখানে মাত্র ৬০০ টাকায় এক কেজি চিনা চুমকি পাওয়া যাচ্ছে।” |
বাগদিপাড়ায় শোলার সাজশিল্পী মনোজ বাগ বলেন, “গত বছর সরস্বতী পুজো থেকেই সবুজ শোলার সাজের চাহিদা শুরু হয়েছে। সাদা শোলায় সবুজ রং করে আর সবুজ কাগজের ব্যবহারে এই সাজ তৈরি হয়। আমি গত সরস্বতী পুজোয় স্থানীয় দুটি ক্লাবের জন্য পুরো সবুজ দুটি সাজ বানিয়েছিলাম। পরিবর্তনের আগে সাজে সবুজের সামান্য ব্যবহারে অনেকে আপত্তি তুলেছেন।” তাঁর কথায়, “এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। সবুজ রংয়ের ব্যবহারে ক্রেতারা বরং খুশিই হচ্ছেন।”
কিন্তু সাজের মতো সবুজের ছাপ মাটির প্রতিমায় সেভাবে না পড়লেও ছোঁয়া কিন্তু লেগেছে। কৃষ্ণনগর নতুনবাজার পালপাড়ার প্রতিমা শিল্পী রাজীব পাল এ বছর ত্রিশটি প্রতিমা বানাচ্ছেন। যার বেশির ভাগটাই যাবে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায়। প্রতিমার দাম চল্লিশ থেকে আশি হাজার টাকা। রাজীববাবু বলেন, “এ বছর প্রায় গোটা পাঁচেক ক্লাবের কর্তারা অনুরোধ করেছিলেন প্রতিমায় সবুজের ছোঁয়া দিতে। কিন্তু যেহেতু বেশির ভাগ প্রতিমাই কৃষ্ণনগরের নিজস্ব ঘরানায় মাটির সাজে এবং মাটির পোশাকে সজ্জিতা, তাই দুর্গার শাড়ি সবুজ করলে দেখতে ভাল লাগবে না। তাই সরস্বতী, গণেশ বা অন্যদের হালকা সবুজের পোশাকে রাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
ঘূর্ণির রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুবীর পাল জানাচ্ছেন, “এ কথা সত্যি যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর সবুজের চাহিদা কিছুটা হলেও বেড়েছে। আমি সবুজ রং ব্যবহার করতে ভালবাসি। এখন দেখছি সবুজ রংয়ের ব্যবহার ক্রেতারাও পছন্দ করছেন।”
নদিয়া জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অয়ন দত্ত স্থানীয় একটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। অয়নবাবু বলছেন, “পরিবর্তনের প্রথম বছরেই আমাদের ক্লাবের সরস্বতী পুজোয় প্রতিমার সাজ করেছিলাম পুরো সবুজ। গত বছর আলোকসজ্জাও করেছি সবুজ। সবুজ নিয়ে ভাবনাটা আমাদের বরাবরের।” |